সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: অতিবৃষ্টির পর উজানের ঢলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা হাওরের ১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবেছে।
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাওরের খামারখাল নদীর পাড় উপচে সাতবিলা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে ফসলি জমিতে। রাতেই হাওরের সব ফসল ডুবে যায়।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন এ তথ্য জানিয়েছেন।হাওরটি দিরাই উপজেলার পঞ্চম বৃহত্তম হাওর।
তিনি বলেন, ‘এই হাওরের বেশিরভাগ ধান কেটে ফেলায় খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উজানে ঢল অব্যাহত থাকায় নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। সোমবার সকাল ৯ টায় হুরামন্দিরা হাওরের পানি বিপদসীমার মাত্র নয় সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত রোববার ভারী বৃষ্টিপাতের পর উজানে প্রবল ঢেউয়ে পাটলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বর্ধিত গুরমার ২৭ নং প্রকল্পটি দেবে গিয়ে পানি ঢুকে পড়ছে গ্রামে।
বর্ধিত গুরমা হাওর অংশের খাউজ্যাউরি, নোয়াল, আইন্যা, কলমা, গলগলিয়া ও ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা এলাকার হাওরগুলোর ফসলি জমিও ডুবে গেছে।
সুনামগঞ্জের ৪২টি হাওরের ১৬৮টি পয়েন্টে বাঁধ রক্ষার লড়াই করছেন কৃষক, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্নিষ্টরা।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এবার সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ টন।
এদিকে ছয় মাসের পরিশ্রমের ধান কেটে গোলায় আনার সময়কালে জেলার অনেক স্থানেই বাঁধ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ২ এপ্রিল থেকে নামা উজানের ঢলে জেলার ১৪০০ কিলোমিটার হাওর রক্ষা বাঁধের ১৬৮টি পয়েন্টের কোনো স্থানে ধস-ফাটল, কোনো কোনো অংশে বাঁধ ছুঁইয়ে পানি ঢুকছে।
এদিকে হাওরের সবকটি বাঁধ পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থায় থাকায় সব বাঁধে অবস্থান নিয়ে পাহারা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওরে পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা হাওরে বাঁধ খুবই ঝুঁকিতে। সবগুলো বাঁধে পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থায় আছে তাই সবাইকে বাঁধে অবস্থান নিয়ে পাহাড় দিতে হবে। আর যেসব হাওরে ধান ৮০ ভাগ পাকা হয়ে গেছে দ্রুত তাদের ধান কাটতে নির্দেশনা দেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানির সোমবার বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । এ ছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটায় ও পাটলাই নদীর পানিও বেড়েছে।
গেল ২ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত হাওরে ১৬টি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি বোরো ফসল।
সুনামগঞ্জের ছোট-বড় দেড়শ হাওরের মধ্যে ৪২ হাওরের ফসল রক্ষার জন্য ১২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় ৭২৭টি পিআইসির মাধ্যমে ৫৩৭ কিলোমিটার বাঁধ করা হয়েছে। সে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ত্রুটি থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
আরো পড়ুন : আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিলে বিএনপিকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব