ছোটগল্প; সত্যিই মজিবর আর দুলজানদের বয়স বেড়ে গেছে!

প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল শিল্প-সাহিত্য

রেদওয়ান রনি: ‘বুড়োটার ডায়াবেটিস হাই, তারপরেও পায়েস খাওয়ার খায়েশ যায় না।’ মনে মনে খিস্তি আওড়ায় বুড়ি। তবে এসব কিছুই সে বলে না বুড়োকে।

শুক্রবারে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হন দলে দলে, বস্তির টিনশেডে বসে সামনের হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের দিক থেকে আসা পোলাওয়ের গন্ধ বুড়িকে মনে করিয়ে দেয়, তাদের অবস্থা যখন ভালো ছিল তখনকার কথা। তাদের বাসায়ও এমন রান্না হতো, বুড়োর চোখ সব খাবার ছাপিয়ে চেয়ে থাকত পায়েসের দিকে, কী যে নেশা তার মিষ্টি জিনিসটার ওপরে! ডায়াবেটিস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে তাদের আর্থিক সচ্ছলতা। তাতে একে একে আর সবাই ছেড়ে গেলেও মিষ্টির নেশা একটু-আধটু রয়েই গেছে বুড়োর, মানে মজিবরের। কিন্তু মুখে কোনো দিন সে কথা সে বলবে না দুলুজানকে, পাছে বুড়ির মন খারাপ হয়!

আজ অনেক দিন বাদে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সগীর এসে ইফতারের দাওয়াত দিছে মজিবরকে। কী খাওয়াবে শোনার পর দুলুর মনটা বেজায় ভালো, বুড়ো তো তা-ও অনেক দিন পর একটু পোলাওয়ের স্বাদ পাবে!

ট্রাঙ্ক থেকে নাতি জব্বারের পাঠানো পাঞ্জাবিটা পরে বের হন মজিবর। দুলুজান অনেক দিন পর লোকটার মুখে একটু আনন্দের ছায়া দেখে। আর তা দেখে তার মনেও ঝিলিক দেয় খুশি।

অনুষ্ঠানে অনেক মানুষ। নতুন অনেক লোকজন সমিতিতে এখন। তার সময়ের লোকজন বেশির ভাগই বোধ হয় মরে-টরে গেছে, কাউকে দেখা যাচ্ছে না তেমন একটা। এক কোনায় বসে পরিচিত মুখ খুঁজতে থাকে বুড়ো মজিবর। এর মধ্যে ইফতারের পোলাও আসে, সঙ্গে আস্ত একটা ডিম। তবে মজিবর খুঁজতে থাকে পায়েস বা ফিরনি।

এদিকে অনেক দিন পর দুলু আজ একাই ইফতার করবে। আয়োজন বলতে একটু মুড়ি ভেজানো, সেটাই খাবে গুড় দিয়ে। এমন সময় সে শুনতে পায় শোরগোল, পিকআপে করে কোনো কোম্পানি বস্তিতে ঈদের জন্য চাল-তেল-চিনি দিতে এসেছে। কিন্তু এসব ত্রাণ নেওয়া একদম পছন্দ করে না বুড়ো। তাই বুড়িও ও পথ মাড়ায় না। কিন্তু আজ মজিবরের না থাকার সুবাদে মুহূর্তের সিদ্ধান্তে দুলুজান দাঁড়িয়ে যায় লাইনে। অনেক দিন পর আজ বুড়ি একটু পায়েস রান্না করতে পারবে। বুড়োটা এসে দেখে কী খুশিই যে হবে, যতই বকাবকি করুক।

তারাবি শেষে ঘরে ঢোকে মজিবর। একথা-সেকথার পর দুলুজান যখন পায়েসের বাটিটা তার দিকে এগিয়ে দেয়, অবাক চোখে বুড়ো তাকিয়ে থাকে সেই বাটির দিকে। এতে বুড়ি খানেকটা ভয়ই পেয়ে যায় যেন। ইনিয়ে–বিনিয়ে বুড়োকে বলতে থাকে, কীভাবে চাল-চিনি পেয়েছে সে। নিমেষেই বুড়োর চোখটা ছলছল করে ওঠে, এটা কি বয়সের দোষ!

বুড়োও ততক্ষণে অনুষ্ঠান থেকে গোপনে লুকিয়ে নিয়ে আসা পায়েসের কৌটাটা বের করেছে তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে, আজ অনেক দিন পর একসঙ্গে তারা একটু মিষ্টি খাবে।

বুড়ি বুঝতে পারে না, কী বলবে! তার চোখটা দিয়েও কেন যেন পানি পড়তে থাকে, সত্যিই বয়স তাদের বেড়ে গেছে!

সুত্র- প্রথম আলো

আরে পড়ুন : নারায়ণগঞ্জে সাত খুন; প্রতিবছর ঈদ এলেও আনন্দ নেই জাহাঙ্গীরের পরিবারে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *