পুলিশের একটি রেঞ্জের অধীনে বেশ কয়েকটি জেলা থাকে। সেই সব জেলার পুলিশ প্রশাসনের সবোর্চ্চ পদে আসীন রয়েছেন একজন করে পুলিশ সুপার (এসপি)। সেই একটি রেঞ্জের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের মধ্য থেকে চারজনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই চার এসপি তাদের অধীনস্থ বেশ কিছু কর্মকতার্র বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, ঘুষ গ্রহণ, হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয় রেঞ্জ প্রধানের নির্দেশে। কিন্তু বিভাগীয় মামলা যাদের বিরুদ্ধে, এসিআরে তাদেরকে সবোর্চ্চ নম্বর দিয়েছেন ওই চার এসপি।
এ নিয়ে ওই রেঞ্জ প্রধান (ডিআইজি)। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই চার এসপি অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ প্রতিমাসে পেয়েছেন। ঘুষের পুরস্কার হিসাবে এই দুনীর্তিবাজ এসপিরা আরেক দুর্নীতিবাজ অফিসারদের এসিআরে সবোর্চ্চ নম্বর দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। যে সকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদেরকে এসিআরে সবোর্চ্চ নম্বর দেন কিভাবে? এতেই প্রমাণিত হয় বেআইনি সুবিধার জন্য এই কাজটি করেছেন চার জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত চার এসপি। সংশ্লিষ্ট এসপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হবেন বলেও জানান এই ডিআইজি।
তিনি জানান, এসপিদের এ ধরনের কর্মকান্ডের কারণে পুলিশের মাঠ পর্যায়ে যারা সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা তারা হতাশ হয়ে পড়েন। এই সকল কর্মকর্তারা মনে করেন ‘সৎ থেকে লাভ কি? সততার কোন পুরস্কার নাই।’ এটাই পুলিশ বাহিনীতে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বৃদ্ধি পাওয়ার একটা অন্যতম কারণ। ওই ডিআইজির মতে, এসপিরা যদি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে জেলার দায়িত্ব পালন করেন তাহলে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৮০ ভাগই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ধরনের অভ্যন্তরীণ একটা বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে না আনলে ভবিষ্যতে আমাদের বড় ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতে, পুলিশের মত একটি অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বাহিনীতে ঘুষখোর অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে পুলিশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। কয়েকটি রেঞ্জ ব্যতীত বাকি রেঞ্জগুলোর অধিকাংশ এসপির বিরুদ্ধে অনুরূপ তথ্য পাওয়া যায়।
অপর এক রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, তার রেঞ্জের এসপি হতে অফিসারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছি। তিনি তাদের নিয়মিত কঠোর মনিটরিংয়ে রেখেছেন। এজন্য তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
চারটি থানার ওসিরা জানান, ওসি হিসাবে তাদের পোস্টিং নিতে ঘুষ দিতে হয় নিম্নে ২০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা। আবার প্রতি মাসে এসপি বা তার নিচের অফিসারদের নির্ধারিত হারে ঘুষের টাকা পৌছে দিতে হয়। এ কারণে তারা ভালো অফিসার হলেও সৎ থাকতে পারছেন না। এসপি কিংবা উপরের অফিসাররা সৎ হলে তারাও সৎ থাকবেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। ওসিরা বলেন, বর্তমান সরকার তাদের পদ মর্যাদাসহ যে আর্থিক সুবিধা দিয়েছেন তাতে ওসিদের ঘুষ খাওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু সীমিত সংখ্যক ঘুষখোরদের কাছে তারা জিম্মি।
পুলিশের একজন সাবেক আইজিপি জানান, তার দায়িত্ব পালনকালে তিনি এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আড়াই লাখ পুলিশের মধ্যে এদের সংখ্যা মাত্র ১০-১২ জন। এই চক্রটির অপকর্মের প্রভাব পুরো বাহিনীতে পড়েছে। এতে সরকার ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমার সময়ে সরকার পুলিশ বাহিনীকে পদমর্যাদাসহ আর্থিক সুবিধা দিয়েছেন। বর্তমানেও করে যাচ্ছেন। এই দুষ্টচক্রের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়া কাম্য নয়।
সুত্র-ইত্তেফাক
আরো পড়ুন : আজ ১৩ জুন; আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা