নিজস্ব প্রতিবেদক : কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ নিয়ে জটিলতা দূর হয়েছে। পদ্মা সেতুর আদলে সেতুর প্রাথমিক নকশা তৈরি হয়েছে। ওপরের তলায় চলবে গাড়ি এবং নিচে রেল। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরে শুরু হবে নির্মাণকাজ। শেষ হতে সময় লাগবে আরও চার বছর। আর এ সেতু নির্মাণ করা হবে বর্তমান সেতুর ৭০ মিটার উজানে বা উত্তরে। এতে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। আগের প্রস্তাবিত নকশায় ব্যয় ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বুধবার সকালে সম্ভাব্য দাতা সংস্থা কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন বা দোহা প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে সেতু নির্মাণের স্থান, নকশা, ব্যয় ও নির্মাণকাল নিয়ে প্রাথমিক প্রস্তাব রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছে।
প্রাথমিক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সম্মেলনকক্ষে গতকাল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, কালুরঘাট সেতু নির্মাণসংক্রান্ত ফোকাল পারসন মো. গোলাম মোস্তফাসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেটির ওপর ট্রেন চলে ১০ কিলোমিটার গতিতে। সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করে। ট্রেন চলাচল করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। একমুখী যান চলাচলের কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটে নতুন সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনও আগামী বছর চালু হতে পারে। এ রেললাইনের সুফল কালুরঘাট সেতুর জন্য আটকে যেতে পারে।
গতকাল সভা শেষে সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেতু নির্মাণের বিষয়টি একনেকের সভায় উঠেও ফেরত এসেছিল। তখন নির্মাণব্যয়ও অনেক কম ছিল। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তবে এখন সেতু নির্মাণের জটিলতা দূর হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রস্তাবিত নকশায় সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৭৮০ মিটার। নদীর বাইরে স্থলপথে থাকবে ৫ দশমিক ৬২ কিলোমিটার। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ১০০ মিটার। মোট পিলার থাকবে আটটি। সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার। এর ওপরের ডেকে থাকবে সড়ক ও নিচের ডেকে রেললাইন। উভয়ই হবে দ্বিমুখী, অর্থাৎ দুই লেনের।
মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সমীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আগস্টে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর দরপত্র দেওয়া হবে। নির্মাণকাল প্রায় চার বছর। দরপত্র শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস লাগবে। আগামী বছর কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
সেতুর জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) সহজ শর্তে পুরো টাকা বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফোকাল পারসন রেলওয়ের কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা।
প্রস্তাবিত নকশায় সেতুর নির্মাণব্যয় আগের চেয়ে পাঁচ গুণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ফোকাল পারসন মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আগের নকশার সঙ্গে এখনকার নকশা মেলালে হবে না। আগে ছিল এক ডেকে রেল ও সড়কসেতু। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে দ্বিতল সেতু। আগের নকশায় সেতুর নেভিগেশন হাইট ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ মিটার। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ মিটার। তখন ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। নকশায় যেহেতু ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই ব্যয় বেড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : আজ ৭ জুলাই; আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা