বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মতে ‘আওয়ামী বিলিয়নিয়ার’ তৈরির কারখানা বিদ্যুৎ খাত

অর্থনীতি জনদুর্ভোগ জনপ্রতিনিধি জাতীয় প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি শিল্প প্রতিষ্ঠান হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে জাতীয় সংসদে কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তাঁরা বলেছেন, একটি অশুভ চক্র এই খাতকে গ্রাস করেছে। বিদ্যুৎ খাতকে ‘আওয়ামী বিলিয়নিয়ার’ তৈরির কারখানা করা হয়েছে। সরকারের ভুল নীতির কারণে মানুষ বিপর্যস্ত।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা এসব কথা বলেন। এই বিল পাসের প্রস্তাব তুলে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা এমপিদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য। কিন্তু তাঁরা প্রশ্ন করে জবাব পান না। তাঁরা সংসদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা চান। জাতি জানুক, এই কয়েক বছরে সরকার কী করেছে, কী সর্বনাশ হয়েছে। সরকার কী উন্নয়ন করেছে সেটা বলুক।

হারুনুর রশীদ বলেন, তাঁর কাছে তথ্য ও তালিকা আছে। সেটা প্রয়োজনে মন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন। বিদ্যুৎ খাতকে ‘আওয়ামী বিলিয়নিয়ার (ধনকুবের)’ তৈরির কারখানা তৈরি করা হয়েছে। সেই তথ্য ও তালিকা আছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কাকে দেওয়া হয়েছে? বড় বড় ট্রান্সমিশন লাইন-এসব কারখানা কাদের জন্য দেওয়া হয়েছে?

কেন ভারত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে-প্রশ্ন রেখে হারুন বলেন, আগামী তিন-চার বছরে ভারত থেকে চার-পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে যোগ হবে। এগুলো সব বসে থাকেবে। বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না। ভারত আমাদের পানিতে মারছে, সীমান্তে মারছে, বাণিজ্যে মারছে।’

গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকা কোথায় গেছে প্রশ্ন রেখে হারুন বলেন, ‘এই টাকা আপনারা উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছেন। এ বিষয়গুলো জানতে চাইলে, আপনারা এড়িয়ে যান।’

জ্বালানি দুরবস্থার জন্য এলএনজি–নির্ভরতা দায়ী কি না, গত ১০–১৫ বছরে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে কত টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে, এ প্রশ্ন রাখেন বিএনপির এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে মানুষ বিপর্যস্ত। শিল্পকারখানা, বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। এই সরকারের আমলে তিনবার ব্ল্যাক আউট হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হলো, তা সরকার স্পষ্ট করেনি।

বিএনপি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের গলাবাজি দেখার মতো। টুকরিতে করে বিদ্যুৎ ফেরি করার দিন শেষ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা যতই থাক না কেন, ঘরে ঘরে চলছে লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ খাতে দায়মুক্তি দিয়ে রেন্টাল–কুইক রেন্টাল করে বিপুল লুটপাট করা হয়েছে অভিযোগ করে রুমিন বলেন, কিছু ব্যক্তির হাতে অবিশ্বাস্য পরিমাণ টাকা তুলে দিতে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হয়। একদিন এসব লুটপাটের তদন্ত হবে। যারা লুটপাটে জড়িত হবে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুরবস্থা চলছে। একটি অশুভ চক্র এই খাতকে গ্রাস করেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হয়, তিনি ওই চক্রের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন।

জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, গ্যাস–সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। নিজেদের গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হলে এ অবস্থা হতো না। এখন দিনের বেলায় ঢাকায় রান্নার গ্যাস পাওয়া যায় না।

বিরোধীদের বক্তব্যের জবাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দায়মুক্তি নিয়ে এই সংসদেই বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলও এতে অংশ নিয়েছে। এই বিধান করার কারণেই মানুষ সুবিধা ভোগ করছে। তিনি বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্য যদি লিখিতভাবে প্রশ্ন করেন, তিনি লিখিতভাবে সব জবাব দেবেন।

নসরুল হামিদ বলেন, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়েছে। দেশের ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কারখানা গ্যাসে চলে। বিদ্যুৎ কারখানায় গ্যাস দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে লোডশেডিং করা হয়েছে। সরকার এই মাসেই লোডেশেডিং থেকে বের হয়ে এসেছে। চাহিদা আস্তে আস্তে কমে আসছে। আগামী বছর পরিস্থিতি খুব ভালোর দিকে যাবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে লোডশেডিংয়ে যেতে হয়েছে। জ্বালানি আমদানির বেশ কিছু অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তেল আমদানি করা হচ্ছে উচ্চমূল্যে। তেলের মূল্য সমন্বয় করার পরেও বিপিসির বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।

বিএনপির আমলে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো দাবি করে নসরুল হামিদ বলেন, তখন সেটাকে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নিয়েছিল। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কারণ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী, পায়রা থেকে রংপুর বিদ্যুৎ নিতে সিস্টেম লস ও ট্রান্সমিশন ক্ষতি ৪ শতাংশ। সেটা লাভজনক হবে না। কম দূরত্বে বিদ্যুৎ আনলে খরচ কম পড়বে। ভারত থেকে ট্রান্সমিশন খরচ কম পড়বে।

বিল পাস

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার জন্য নতুন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। সামরিক আমলে প্রণীত এ–সংক্রান্ত আইন বাতিল করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে। গতকাল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ‘বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বিল-২০২২’ সংসদে তোলেন। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। এর আগে বিলটির ওপর দেওয়া সংশোধনী এবং যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার।

আরো পড়ুন : গাইবান্ধার যত খবর

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *