পুলিশ, ডিবি ও র‍্যাব খুঁজছে এত রাতে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে ফারদিন কেন

অনুসন্ধানী আইন-আদালত ক্রাইম নিউজ প্রচ্ছদ শিক্ষা

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনকে কারা কী কারণে হত্যা করেছে, এসব প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছে না পুলিশ। ফারদিন জুরাইনে যাঁর কাছে গিয়েছিলেন, তাঁকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজনদের ধরতে চনপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর ওরফে পরশকে কারা কী কারণে হত্যা করেছে, তা এখনো জানা যায়নি। হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফারদিন রামপুরা থেকে যাঁর সঙ্গে দেখা করতে জুরাইনে গিয়েছিলেন, তাঁকে শনাক্ত করা গেছে। এটিসহ কয়েকটি কারণ সামনে রেখে তদন্ত চলছে।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন রাতে রামপুরা থেকে জুরাইনে যান ফারদিন। সেখানে আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির পর তিনি চনপাড়ায় যান। তিনি নিজের ইচ্ছায় গেলেন, নাকি জোর করে কেউ তাঁকে সেখানে নিয়ে গেলেন, এখনো সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত ২টা ৩৫ মিনিটে ফারদিনের মুঠোফোনের সর্বশেষ অবস্থান (রেডিও সিগন্যাল) চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে দেখা গেছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, ৪ নভেম্বর রাতে তিনি সেখানে এসেছিলেন। এই সূত্র ধরে তাঁকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের ধরতে চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ, ডিবি ও র‍্যাব।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ফারদিনের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর সর্বশেষ অবস্থানও ছিল শীতলক্ষ্যা নদীতীরে। তাঁর সর্বশেষ অবস্থান থেকে মরদেহ উদ্ধারের স্থান নদীপথে সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটার ভাটিতে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ৪ নভেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার নবকিশলয় উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে একটি মাদক বেচাকেনার স্থানে হইচই ও হট্টগোলের শব্দ পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মাদক বেচাকেনার ওই এলাকা স্থানীয় এক তরুণ নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি নিজের তিনতলা ভবনের নিচতলায় মাদক বেচাকেনা করেন। কাউকে কাউকে সেখানে বসে মাদক সেবন করতে দেখা যায়।

ফারদিন হত্যার সঙ্গে কোনো মাদক চক্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, পারিবারিক, প্রেমঘটিত, রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে স্পেনের মাদ্রিদে যাওয়া নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল কি না, সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গতকাল তদন্ত–সংশ্লিষ্ট একটি দল চনপাড়ায় গেছে। তারা সেখান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।

অবশ্য ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ বলেন, এখন পর্যন্ত এ হত্যার সঙ্গে মাদকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

মাদকের বিষয়টি ফারদিনের পরিবারও কোনোভাবে মেলাতে পারছে না। তাঁর মা–বাবা বলছেন, তাঁদের ছেলেকে কেউ কোনো দিন ধূমপান করতেই দেখেননি। সেই ছেলে পরীক্ষার আগের দিন রাতে মাদক কিনতে চনপাড়া যাবে, সেটা তাঁদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।

ফারদিনের মা–বাবা বলছেন, বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীকে মাদক সংগ্রহ করতে হলে এত দূর যেতে হয়? ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় কোন জিনিস পাওয়া যায় না?

ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এখন বলা হচ্ছে মাদকের কথা। তাঁর ছেলে ধূমপানই করে না, সে মাদক কিনতে সেখানে কেন যাবে।

৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত বুধবার দিবাগত রাতে বাবা কাজী নূর উদ্দিন রাজধানীর রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলায় ছেলের বন্ধু আয়াতুল্লাহ বুশরার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে রামপুরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

আরো পড়ুন : ধানের রাজ্যে গুদাম খালি, তবু নাকি যথেষ্ট পরিমাণে চালের মজুত রয়েছে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *