সিলেট জেলায় গণসমাবেশের দিন শনিবার সকাল-সন্ধ্যা পরিবহন ধর্মঘট। বাকি তিন জেলায় ৩৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু আজ সকাল ছয়টা থেকে।
সিলেট প্রতিবেদক: বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন সিলেট বিভাগের চার জেলাতেই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হলো। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে গণসমাবেশের আগের দিন আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে ধর্মঘট শুরু হবে, ৩৬ ঘণ্টার এ ধর্মঘট চলবে গণসমাবেশের দিন কাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। কেবল সিলেট জেলায় শনিবার সকাল-সন্ধ্যা ১২ ঘণ্টা ধর্মঘট চলবে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কয়েক শ মোটরসাইকেল নিয়ে সিলেট নগরে মহড়া দিয়েছেন।
জেলা বাস মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো স্থানীয় বিভিন্ন দাবিতে পৃথকভাবে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সিলেট জেলা ও মৌলভীবাজারে ধর্মঘটের ডাক গত বুধবার দেওয়া হয়েছিল। বাকি দুই জেলা সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে গতকাল।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গণসমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে বাসমালিক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট ডাকতে সরকার বাধ্য করেছে। তবে এতে মোটেও তাঁরা বিচলিত নন দাবি করে নেতারা বলছেন, আগের বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোর মতো এবারও সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে লাখো মানুষ সমবেত হবে।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘হত্যা’র প্রতিবাদ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীন সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ধারাবাহিক গণসমাবেশ করছে। প্রথম গণসমাবেশটি হয় গত ১২ অক্টোবর, চট্টগ্রামে। এরপর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে (বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ) গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ময়মনসিংহ ছাড়া বাকি সব স্থানে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। ময়মনসিংহে গণসমাবেশের দিন ‘অঘোষিত’ ধর্মঘটে গণপরিবহন বন্ধ ছিল।
পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম জানান, সিলেটের সব কটি পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদানসহ চার দফা দাবিতে সিলেট জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ধর্মঘট ডেকেছে।
এদিকে গতকাল বিকেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সিলেট নগরে মহড়া দিয়েছেন। এ সময় তাঁরা বিএনপির সমাবেশস্থলের ২০০ গজ দূরে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান নেন। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সাড়ে তিনটা থেকে নগরের টিলাগড়, লামাবাজার, আম্বরখানা ও দর্শনদেউড়ি থেকে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল নিয়ে পৃথক চারটি মিছিল নগরের চৌহাট্টা এলাকায় জড়ো হয়। পরে চারটি অংশ একত্রে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘোরে।
ছাত্রলীগের মোটরসাইকেল মিছিলে নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ এবং মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ। চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থানকালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। এ সময় তাঁরা বলেন, বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে ছাত্রলীগের কোনো বক্তব্য নেই। তবে কর্মসূচি পালনের নামে শান্তিপ্রিয় সিলেটকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করলে ছাত্রলীগ রুখে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, বিএনপির কর্মসূচি তারা পালন করুক, এতে সমস্যা নেই। তবে কর্মসূচির নামে সিলেটকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে ছাত্রলীগ জবাব দেবে, এটা বোঝাতেই কয়েক হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে শহরে বের হয়েছিলেন তাঁরা।
‘সরকারের ইন্ধনেই পরিবহন ধর্মঘট’
গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে নেওয়া বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচির ওপর কয়েক দিন ধরে হামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। মামলাও করা হচ্ছে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় বিএনপির ৪৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে দুপুরে একটি মামলা হয়েছে। আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই ঘটনায় গতকাল লাখাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফজলে রাব্বী মামলাটি করেন।
এ নিয়ে ৮ নভেম্বরের পর সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলার ঘটনা ঘটল। এসব মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ জন। তবে বিএনপির দাবি, দেড় সপ্তাহে সব মিলিয়ে তাদের ১৯ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সরকার নানাভাবে বিএনপির গণসমাবেশ আয়োজনে বাধাবিপত্তি দিচ্ছে। সরকারের ইন্ধনেই পরিবহন ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে। বিভাগজুড়ে বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করছে। মামলার পাশাপাশি গ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানি চলছে।
‘জনতার ঢল দেখে সরকার আতঙ্কিত’
সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আগামীকাল বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গতকাল দিনভর সিলেট নগর এবং বিভাগের জেলা ও উপজেলাগুলোতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা গণসমাবেশ সফলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে সমাবেশস্থলে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বিএনপির গণসমাবেশগুলোতে জনতার ঢল দেখে সরকার আতঙ্কিত হচ্ছে। তারা মসনদ হারানোর চিন্তায় রয়েছে। এ জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা মামলা দেওয়া শুরু করেছে। বিরোধীদলীয় ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ।