চট্টগ্রামে ৭৬টি আদালতে জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামিদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য নেই। সাধারণত আদালতের হাজতখানা থেকে প্রতিটি এজলাসে আসামি আনা-নেওয়ার জন্য মাত্র একজন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োজিত থাকেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আদালতে নগর পুলিশের ১৭০ থেকে ২০০ পুলিশ সদস্য প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র ৬০ জন। একই অবস্থা জেলা পুলিশেও। সেখানে ২০০ পুলিশ সদস্যের স্থলে রয়েছে ১৩০ জন। নিরাপত্তা জোরদার করা না হলে ঢাকার আদালতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চট্টগ্রামে হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।
আদালতের প্রধান ফটকে পুলিশি তল্লাশিচৌকি না থাকায় যে কেউ অবাধে যাতায়াত করছেন। বিনা প্রয়োজনেও আসছেন অনেকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পলাতক জঙ্গি ও তাঁদের সহযোগীরা আদালতে ঢুকতে পারেন বলে আইনজীবীদের আশঙ্কা। তবে পুলিশ বলছে, প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ সদস্য না থাকলেও আদালতে হাজিরা দিতে আসা জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ আসামিদের বিশেষ নজরদারিতে রাখছেন তাঁরা।
গতকাল রোববার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে ছিটিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মইনুল হোসেন শামীম ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পালিয়ে যাওয়া দুজন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। তাঁরা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এ ঘটনার পর চট্টগ্রামের আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার কোর্ট হিলে আদালত ভবন ও আইনজীবীদের পাঁচটি ভবন (চেম্বার) অবস্থিত। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স অবস্থিত। আদালত ভবনসহ সরকারি এসব কার্যালয়ে এখানে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের যাতায়াত।
আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, এসব ভবনে যাওয়ার একমাত্র ফটক সোনালী ব্যাংকের সামনের মোড়। কিন্তু সেখানে কোনো পুলিশি তল্লাশিচৌকি নেই। যে কেউ অবাধে আসা-যাওয়া করছে। ২০০৫ সালে আদালতে বোমা হামলার পর সেখানে তল্লাশিচৌকি বসানো হলেও চার বছর ধরে সেটি নেই। এ ছাড়া আদালত ভবনের চারপাশে সীমানা দেয়াল না থাকায় যে কেউ অবাধে ঢুকে বের হয়ে যেতে পারেন। সবচেয়ে বেশি লোকজনের যাতায়াত আদালত ভবনের উত্তর পাশে জহুর হকার্স মার্কেট দিয়ে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়া উদ্দিন বলেন, আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও তল্লাশিচৌকি চালুর জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলা হলেও কিছুই হচ্ছে না। ঢাকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে এখানে না ঘটে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম আদালতে প্রায় ৫৫টি জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় প্রতিদিন গড়ে কারাগার ও জামিনে থাকা ২০ থেকে ৩০ জন জঙ্গি আদালতে হাজিরা দেন। কারাগারে আছেন জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগের সাবেক কমান্ডার জাবেদ ইকবালসহ ৪৫ জন জঙ্গি। প্রতিদিন গড়ে ১১০ থেকে ১২০ জন দুর্ধর্ষ আসামি চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। এর সঙ্গে যোগ হয় নগর ও জেলার মোট ৩৩ থানায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা। সব আসামিকে নতুন আদালত ভবনের নিচতলায় অবস্থিত মহানগর ও জেলা হাজতখানায় রাখা হয়। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যরা তাঁদের নিজ নিজ আদালতে নিয়ে যান। হাজিরা শেষে তাঁদের আবার হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তাঁদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালত চত্বরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বলেন, লোকবল কম থাকায় একজন পুলিশ কনস্টেবলকে দিয়ে আসামিদের একটি এজলাসে পাঠানো হয়। যেখানে আরও দুই থেকে তিনজন দরকার। পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ বলেন, আসামিদের নিরাপত্তায় বাড়তি পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকে তল্লাশিচৌকি চালুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। আজ সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটি চালু না হলেও আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের নিয়মিত টহল রয়েছে। জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আদালতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
আরো পড়ুন : শেষ সময়ে জোড়া গোলে নেদারল্যান্ডস’র উচ্ছ্বাস