ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হারের পর বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ শনিবার দিবাগত রাত একটায় উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর বিরুদ্ধে মাঠে নামছে লাতিন আমেরিকার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার জন্য ডু অর ডাই (বিশ্বকাপের পরবর্তী পর্বে যেতে হলে আর্জেন্টিনাকে জিততেই হবে) এ ম্যাচ উপভোগ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়েছেন হাজারো মানুষ।
মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের সৌজন্যে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহযোগিতায় এবারের বিশ্বকাপের সব খেলা দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুটি ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে একটি ডিজিটাল স্ক্রিন বসানো হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও তার আশপাশেও আছে খেলা দেখার ব্যবস্থা। পছন্দের দলের খেলা দেখতে রোজই ক্যাম্পাসে ভিড় জমছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকছেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আজ রাত একটায় কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে মেক্সিকোর মুখোমুখি হচ্ছে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার পরিসংখ্যানে এগিয়ে আছে আর্জেন্টিনা। মোট ৩০টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা ১৫টি ম্যাচে জিতেছে, মেক্সিকো জিতেছে ৪ ম্যাচে। বাকি ১১ ম্যাচ হয়েছে ড্র। দুই দলের মুখোমুখি হওয়া ৩০ ম্যাচের মধ্যে ৩টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বকাপে। ১৯৩০, ২০০৬ ও ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ওই তিন ম্যাচেও জিতেছে আর্জেন্টিনা।
খেলা দেখতে রাত পৌনে ১১টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা ও মুহসীন হলের মাঠে জড়ো হতে শুরু করেছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। রাত পৌনে ১০টার দিকে ভুভুজেলা বাজাতে বাজাতে আর্জেন্টিনার বেশ লম্বা একটি পতাকা নিয়ে মোটরসাইকেলের শোডাউনসহ টিএসসি এলাকায় আসে একদল সমর্থক। তাঁদের দেখে হাত নাড়িয়ে উচ্ছ্বাস দেখান আর্জেন্টিনার জার্সি পরা আবুল কালাম নামের এক ভ্রাম্যমাণ দোকানি।
আবুল কালাম জানালেন, তিনি ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। আশির দশক থেকেই ফুটবলে আর্জেন্টিনার সমর্থন করেন। জানতে চাইলে কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিয়েগো ম্যারাডোনার সময় থেকে আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করছি। আমার ধারণা, আজকে আর্জেন্টিনা কমপক্ষে তিনটি গোল করবে। আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড় মেসি, মার্তিনেজ ও জুলিয়ান আলভারেজ প্রত্যেকে গোল করবে। আগের ম্যাচে সৌদি আরবের সঙ্গে হার একটা অ্যাকসিডেন্ট (দুর্ঘটনা)। আশা করি, এবার আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ঘরে তুলবে।’
শোডাউন নিয়ে ওই দল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে। রাত সোয়া ১১টার দিকে আর্জেন্টিনার পতাকাসহ ক্যাম্পাসের সড়কে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের শোডাউন দিতে দেখা যায় আরেক দল সমর্থককে। সেখানেও অনেকে বাজাচ্ছিলেন ভুভুজেলা।
পরে ওই দুই দল সমর্থক (আগের ও পরের) টিএসসি এলাকার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে আর্জেন্টিনার বড় আকারের একটি পতাকা উড়িয়ে আর্জেন্টিনার পক্ষে নানা স্লোগান দিতে থাকে ওই দলটি। ভুভুজেলার শব্দে তাঁরা কাঁপিয়ে তোলেন পুরো টিএসসি এলাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে থাকেন আরও অনেক সমর্থক। সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে আতশবাজি ফোটান। জানতে চাইলে সেখানে থাকা আরাফাত হোসেন নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ প্রিয় দল আর্জেন্টিনার বিজয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না। আর্জেন্টিনা জিতবেই। ভালোবাসার জায়গা থেকে আমাদের এই অগ্রিম উদ্যাপন।’
এরপর বিক্ষিপ্তভাবে ও দল বেঁধে টিএসসি এলাকায় আসতে থাকেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। তাঁদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও আছেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষেরা। তাঁদের অনেকের গায়ে আর্জেন্টিনার জার্সি, কারও কারও হাতে আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে রং করা আকাশি-নীল রঙের ভুভুজেলা। কেউ এসেছেন সপরিবার, কেউ কেউ বন্ধুদের নিয়ে। এখানে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়স্ক-সব পর্যায়ের মানুষই আছেন।
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মা–বাবার সঙ্গে এসেছে শিশুরাও। রাত ১২টার মধ্যে হাজারো মানুষের সমাগমে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে টিএসসিসহ ক্যাম্পাস এলাকা। এ সুযোগে ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা ক্যাম্পাসের টিএসসি ও মুহসীন হল এলাকায় সাজিয়ে বসেছেন হরেক পণ্যের পসরা।
আরো পড়ুন : রোগীকে জিম্মি করে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটগুলো পকেট কাটার নগ্ন খেলায় মেতে উঠে