২০১৯ সালে দেশে বায়ুদূষণে ৮৮ হাজার মানুষের মৃত্যু, ঢাকা বিভাগ শীর্ষে

অনুসন্ধানী জাতীয় প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য কথা

বাংলাদেশ বায়ুদূষণের প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৯ সালে দেশে বায়ুদূষণের প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। দেশে বায়ুদূষণে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এরপরই অবস্থান বরিশাল বিভাগের। গতকাল রবিবার বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বায়ুদূষণের নতুন তথ্য-প্রমাণ এবং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব শিরোনামে প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। 

রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রভাবে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার আর্থিক মূল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। যে অঞ্চলে বায়ুদূষণ বেশি সেখানে বিষণ্ণতায় ভোগার সংখ্যাও বেশি। বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিষণ্ণতায় ভুগছেন ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সিরা। সামগ্রিকভাবে দেশের বায়ুদূষণযুক্ত এলাকার ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ নারী এবং ১১ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ বিষণ্ণতায় ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মাত্রা থেকে ১ শতাংশ দূষণ বাড়লে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ২০ গুণ বেড়ে যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ভেতরে বায়ুদূষণের দিক দিয়ে প্রথমে আছে ঢাকা। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার বরিশাল বিভাগ। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে বায়ুদূষণ অপেক্ষাকৃত কম।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা যানবাহনে যে জ্বালানি তেল ব্যবহার করি, তাতে দূষণ বেশি হয়। দূষণ কমাতে উন্নত মানের তেল আমদানি করতে হবে। সিগারেটের ধোঁয়াকে বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তামাকের কারণে সারা বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তামাকের ক্ষেত্রে সরকার রাজস্ব বাড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। জনস্বাস্থ্যকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। তামাক জনস্বাস্থ্যের জন্য আরো ভয়ানক। কিন্তু তামাক বন্ধের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে। প্রতিবেদনে দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনটি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই আছে যানবাহনের ধোঁয়া। যানজটের কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ধোঁয়া বাড়ছে। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছরই বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ এবং রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত বায়ুর শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে। ২০১৯ সালে বায়ুদূষণকে বাংলাদেশে মানুষকে মৃত্যু এবং অক্ষমতার দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বড় ঝুঁকি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। দেশে ২০১৯ সালে ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়েছে। ইটভাটার চুল্লি দিয়ে নির্গত কালো ধোঁয়া দূষিত করছে বাতাস। এরপরই রয়েছে শুষ্ক মৌসুমে অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতের কারণে সৃষ্টি হওয়া ধুলা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যানজট ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমানের চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি এবং ইটভাটার কারণে যে দূষণ হয়, তা ১৩৬ শতাংশ বেশি। দূষিত এলাকার প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট। নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য বক্ষব্যাধিও এসব এলাকার বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে দেখা গেছে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কৃষিকাজের কারণে আমাদের দূষণ বাড়ছে। তাই বলে কৃষিকাজ তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। একইভাবে নির্মাণকাজও আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। বন্ধ করার সুযোগ নেই। তবে এসব কাজের মাধ্যমে যে দূষণ হয়, তা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেন।

আরো পড়ুন : ইরানে এবারের বিক্ষোভের স্লোগান ‘নারী, জীবন, মুক্তি’

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *