এক বার বিশ্বকাপে খেলবেন না দিয়েগো মারাদোনা। তার নাকি ইনজুরি। ফিফা তো মহাটেনশনে পড়ে গেল। মারাদোনা না থাকলে বিশ্বকাপের আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যাবে কি না। এমন সময় ফিফার বড় বড় স্পন্সররা নাক গলালেন। মারাদোনাকে থাকতে হবে। মারাদোনা না খেললে বিশ্বকাপের কিছুই থাকবে না। ফিফা মাথা ঘামাতে শুরু করল। মারাদোনা যেন ৯৪ বিশ্বকাপে খেলে তার জন্য পেছনের টেবিলে কাজ করল ফিফা।
বিশ্বকাপে কিছু ফুটবলার থাকে যারা আলো জ্বালিয়ে রাখেন। মেসি, নেইমার, রোনালদো বিশ্বকাপেরই আলো। নেইমার, মেসি, রোনালদো, সুয়ারেজ, লেভান্ডভস্কির নামই চলে আসে আলোর রেখায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, একে একে সব বিদায় নিয়েছে। উরুগুয়ের সুয়ারেজ, পোল্যান্ডের লেভান্ডভস্কি, ব্রাজিলের নেইমার, পর্তুগালের রোনালদো বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নেই। যাদের হাতে বিশ্বকাপের মশাল থাকে তারা এখন বাড়ির বেডরুমে। একমাত্র টিকে আছেন মেসি। আর্জেন্টিনাকে টানছেন তিনি। মেসিকে ঘিরেই এখন বিশ্বকাপের সব আলো। যারা মেসিকে অপছন্দ করেন তারাও মেসি ছাড়া আর কাউকে তালিকার উপরে রাখতে পারছেন না। বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকরাও মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। অর্ধেক ব্রাজিল, অর্ধেক আর্জেন্টিনা। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন হচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল প্রিয় মানুষের কাছে দ্বিতীয়, তৃতীয় চয়েস।
ব্রাজিল বিদায় নেওয়াতে অনেকই খেলা দেখাই ছেড়ে দিয়েছেন। বিশ্বকাপের খেলায় টিভির পর্দায় চোখ রাখতে চাইছেন না। ব্রাজিলের বিদায়ে মনটা এতই খারাপ হয়েছে যে, মেনেই নিতে পারছেন না। দোহায় অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে, ব্রাজিলের বিদায় নিয়ে। তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি না। ব্রাজিলের সমর্থকরা লম্বা সময়ের জন্য এসেছিলেন। ফাইনাল খেলবে ব্রাজিল। নেইমার ট্রফি নিয়ে পেলের হাতে তুলে দেবেন। এমন স্বপ্নটা বুকে এঁকেই দোহায় ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন নেইমার। পেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। আইসিউতে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরই নেইমারদের খোঁজ নিয়েছিলেন পেলে।
নক আউটের শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচটা তিন মিনিট ব্যবধানে ১-১ হয়ে যায়। টাইব্রেকিংয়ে হেরে যায় ব্রাজিল। নেইমারের স্মরণীয় গোলটা বৃথা যায় সেদিন। স্বপ্ন ভেঙে যায় সেসব দর্শকের যারা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল দেকতে মুখিয়ে ছিলেন। নেইমারের বিদায় বিশ্বকাপের অর্ধেক আলো নিভিয়ে দিয়েছে। এরই আগে চলে গেছেন উরুগুয়ের সুয়ারেজ, পোল্যান্ডের লেবান্ডভস্কি, বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড, সব শেষ চলে গেলেন রোনালদো। যিনি ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার ফুটবল ভক্তদের কাছে আলাদা জায়গা নিয়েছিলেন। সেই রোনালদোর বিদায়টাও সুখকর ছিল না।
সব প্রদীপ নিভে গেলেও বিশ্বকাপের আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন মেসি। তার হাতেই মূলত বিশ্বকাপের মশাল। উড়ন্ত আর্জেন্টিনাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফিফাও খুশি ব্রাজিলের বিদায়ে বিশ্বকাপের রং একটু হলেও কমেছে। তবে মেসির আর্জেন্টিনাই এখন বিশ্বকাপের রং ধরে রেখেছেন। মেসির হাতে রয়েছে বিশ্বকাপের মশাল। যতক্ষণ থাকবে আর্জেন্টিনা, ততক্ষণ বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকও আগ্রহের চোখ রাখবেন। তবে মেসির হাতে মশাল থাকলেও ফরাসি ফুটবলের সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে যেভাবে তার দলকে টানছেন তিনিও বিশ্বকাপের মঞ্চে আলো ছড়ানো আরেক তারকা। তার ক্ষীপ্রগতির ফুটবল দর্শক মনের জায়গাটা দিনে দিনে প্রশস্ত করছেন। ফুটবল পণ্ডিতরা বলছেন, নেইমার, মেসি, রোনালদোর পরে এমবাপ্পে হতে পারেন আগামী বিশ্বকাপের বড় তারকা।
কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্স-মরক্কো। আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া লড়াই। কোনো কারণে এই দল বিদায় নিলে বিশ্বকাপের মঞ্চটা প্রায় ফাঁকাই হয়ে যাবে। তবে মিশরের একজন সাবেক ফুটবলার আল থুয়াম স্টেডিয়ামে জানিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে খেলবে আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স।
আরো পড়ুন : জেনে নিন কোন কারণে সেমিফাইনালে ব্যবহৃত হবে নতুন বল