ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার ৪৬ বছর বয়সী নারী সুভদ্রা। তিনি শুধু এই একটি নামই ব্যবহার করেন। গত আগস্টে তাঁর স্বামী মারা যান। এরপর তিন সন্তানকে নিয়ে অতিকষ্টে তাঁর দিন কাটছিল। অসুস্থতার কারণে সবচেয়ে ছোট ছেলেটি চলাফেরা করতে পারে না। তাই চাইলেও তিনি কোনো চাকরি করতে পারছিলেন না।
এদিকে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার অবস্থাও আর সুভদ্রার নেই। নিরুপায় হয়ে বাবা হারানো সন্তানদের জন্য খাবার কিনতে ছেলের শিক্ষিকার কাছে ৫০০ রুপি সাহায্য চেয়েছিলেন।
আরো পড়ুন : স্বরূপকাঠিতে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয়
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নারীর দুর্দশা দেখে ওই শিক্ষিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে নামেন। গত সোমবার নাগাদ পরিবারটি ৫৫ লাখ রুপি সহায়তা পেয়েছে।
ঘটনার শুরুটা হয় শুক্রবার। সাহায্যের জন্য ওই দিন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক গিরিজা হরিকুমারের কাছে যান সুভদ্রা। ওই স্কুলে তাঁর মেজ ছেলে পড়ে। শিক্ষিকাকে তিনি জানান, ঘরে সন্তানদের মুখে তুলে দেওয়ার মতো কিছু নেই।
আরো পড়ুন : ফরিদপুর মুসলিম মিশনের শত শত এতিম শিশুর অভিভাবকের নিজেরই ছিল না থাকার জায়গা
হিন্দির শিক্ষক গিরিজা। বিবিসিকে তিনি বলেন, নিজের ছাত্র অভিষেকের কাছে আগেই জানতে চেয়েছিলেন, বাবার মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের চলতে সমস্যা হচ্ছিল কি না। তবে এই প্রথম ওই ছাত্র ও তার মা সাহায্যের জন্য এসেছিলেন।
গিরিজা বলেন, ‘আমি তাঁকে এক হাজার রুপি দিলাম। তাঁকে আশ্বাস দিলাম, তাঁদের জন্য আমি কিছু একটা করব।’
এরপর গিরিজা নিজ চোখে পরিবারটির অবস্থা দেখতে যান। তিনি দেখেন, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পরিবারটির দিন কাটাচ্ছে। এই শিক্ষিকা বলেন, রান্নাঘরে সামান্য কিছু চাল ছিল। বাচ্চাদের খাওয়ার মতো আর কিছু নেই।
আরো পড়ুন : হকার আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ছেলে মাতাচ্ছেন বিশ্বকাপ
গিরিজা বলেন, ‘আমার মনে হলো, সুভদ্রাকে এখন সামান্য পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কোনো মানে হয় না। কারণ, সেটা হবে পরিবারটির জন্য একেবারেই অপ্রতুল।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় গিরিজা পরিবারটির দুর্দশার কথা তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবারটিকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ জানান তিনি। গিরিজা তাঁর পোস্টে সুভদ্রার ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্যও দেন, যাতে ওই নারী সরাসরিই অর্থটা পান।
গিরিজার পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। সোমবার নাগাদ অপরিচিত দয়ালু লোকজনের কাছ থেকে ৫৫ লাখ রুপি পেয়েছে পরিবারটি।
ঘরের কাজে হাত দিয়ে শেষ করার আগেই মারা যান সুভদ্রার স্বামী। কিছু অর্থ ঘরের বাকি কাজ শেষ করতে খরচ করা হবে। বাকিটা ব্যাংকে জমা রাখা হবে। লভ্যাংশ দিয়ে তাঁদের প্রাত্যহিক ব্যয় মেটানো হবে। তহবিল সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন : অর্ধশত মামলার আসামি পপির শেল্টার দাতা কারা?