গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ঢাকায় ছিনতাই করছে, এমন এক চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ১৫ বছর ধরে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ছিনতাই করে আসছে চক্রটি।
এই চক্রের লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা বহনকারী ব্যক্তি, মানি একচেঞ্জ ব্যবসায়ী ও হুন্ডি কারবারিরা। ডিবি বলছে, মাসে দুই থেকে তিনটি ছিনতাই করেন চক্রটির সদস্যরা। লাখ টাকার নিচে ছিনতাই করেন না তাঁরা।
ডিবি সূত্র জানায়, ভাড়া করা দুটি গাড়ি নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ঢাকার এমন এলাকাগুলোতে ঘুরতে থাকে এই ছিনতাইকারী চক্র। সাত–আটজনের চক্রটি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ছিনতাই করে। মাস চুক্তিতে গাড়ি ভাড়া করে, সেই গাড়ি ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার করেন চক্রের সদস্যরা। ভাগ হয়ে কাজ করা চক্রের একটি দল এসব প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসা ব্যক্তিদের তথ্য গাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের সরবরাহ করে। এরপর গাড়িতে থাকা ছিনতাইকারীরা ওই ব্যক্তিকে অনুসরণ করে সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে ডিবি পরিচয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে তোলেন। পরে হাতকড়া পরিয়ে টাকা কেড়ে নিয়ে ঢাকার আশপাশের মহাসড়কের পাশে তাঁকে ফেলে দেন।
ডিবি আরও জানায়, চক্রের প্রধান শহিদুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছয়টি মামলা রয়েছে। ছিনতাই চক্রের একজন পিযুস সুর। তিনি একসময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকরি করতেন। অপরাধে জড়িয়ে ২০১৭ সালে চাকরি চলে যায়। পিযুস এই চক্রের অন্যতম সদস্য। ছিনতাইয়ের সময় তিনি নিজেকে সহকারী পুলিশ সুপার পরিচয় দেন।
চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন জোবায়ের হোসেন, গাড়িচালক মো. হারুন, আরিফ হোসেন ও খোকন চন্দ্র দেবনাথ।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সম্প্রতি মতিঝিল থেকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ডিবি সূত্র জানায়, চক্রের প্রধান শহিদুল বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আবার ছিনতাইয়ে জড়ান তিনি। ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইয়ের জন্য এ চক্রের সদস্যদের কাছে রয়েছে হাতকড়া, অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
যেভাবে শনাক্ত হলো চক্রটি
ডিবি সূত্র জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে মতিঝিলের সিটি সেন্টার এলাকায় রিকশায় যাচ্ছিলেন একজন মানি একচেঞ্জ ব্যবসায়ী। দোকান থেকে বের হওয়ার পর তাঁকে অনুসরণ করতে থাকেন চক্রের সদস্যরা। একপর্যায়ে মতিঝিলের একটি বেকারির সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে ওই ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলে নেন তাঁরা। পরে তাঁকে নিয়ে দোলাইপাড় টোল প্লাজা ও ধলেশ্বরী টোল প্লাজা হয়ে মাওয়া সড়কে যান। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই করে তাঁকে মাওয়া–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পিডিএল ক্যাম্পের কাছে ফেলে দেন তাঁরা।
পরে এ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চক্রের পাঁচ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়।
আরো পড়ুন : বিএনপি থেকে বহিষ্কার হলো আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে