বাসার অপ্রয়োজনীয় কাপড় সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য রাস্তার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি দেয়াল নির্ধারণ করার উদ্যোগই ‘মানবতার দেয়াল’। সুবিধাবঞ্চিত মানুষ চাইলেই সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাপড়টা নিয়ে যাবেন নির্দ্বিধায়। এই তীব্র শীতে চট্টগ্রাম নগরে রাস্তা, ফুটওভার ব্রিজসহ খোলা আকাশের নিচে বাস করা বাস্তুহীন মানুষের সংখ্যা অনেক। এসব বাস্তুহীন মানুষ যেখানে ঠিকমতো খেতে পারে না, শীতের গরম পোশাক তাদের জন্য বিলাসিতা মাত্র। কিন্তু বছর খানিক আগেও শহরের নানা প্রান্তে গড়ে তোলা ‘মানবতার দেয়াল’ থেকে প্রয়োজনীয় পোশাক ও গরম কাপড় নিয়ে গেছে ভবঘুরেসহ বাস্তুহীন লোকজন। এ শীতে ভ্রাম্যমাণ সেসব বাস্তুহীন মানুষ রাস্তার ‘মানবতার দেয়াল’-এর দিকে তাকিয়ে থাকলেও ‘মানবতার দেয়াল’গুলোতে এখন আর দেখা যাচ্ছে না মানবতার চিহ্নমাত্র! যে কয়েকটিতে কাপড় আছে তা একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী, এসব কাপড় রাখলেও ব্যবহার করার মতো না হওয়ায় নিচ্ছেন না লোকজন। নগরীর কাজীর দেউড়ি সার্কিট হাউসের গেটের পাশে একটি মানবতার দেয়াল ছিল। সেখান থেকে কাজীর দেউড়ি, স্টেডিয়াম এলাকাসহ আশপাশে থাকা ভবঘুরে বাস্তুহীনরা তাদের প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সে দেয়ালটি এখন আর নেই। যার কারণে অনেকে কাপড়ের জন্য আগ্রহ নিয়ে থাকলেও জুটছে না কাপড়। কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক এলাকার ফুটপাতে বসবাস করা এক ভবঘুরে বলেন, ওখানে আগে পুরাতন কাপড় রাখতেন লোকজন। সেখান থেকে আমিও কয়েকবার কাপড় নিয়েছিলাম। কয়েক দিন আগে থেকে দেখি কাপড় রাখার সে জায়গাটা নেই। আগে শীতের সময় বড়লোকেরা এসে আমাদের কম্বল দিতেন, এখন সেটাও দেন না।
বছর খানেক আগে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান দেয়ালে দেয়ালে গড়ে তোলে ‘মানবতার দেয়াল’। এতে লেখা থাকে- ‘আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যান, অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যান’।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইমরান সাঈদ রবিন বলেন, বেশির ভাগ সময় মানবতার দেয়ালে লোকজন যে কাপড় রাখেন তা একদম ব্যবহার করার মতো নয়। এ কারণে যার কাপড়ের প্রয়োজন তিনি নিতে আগ্রহী হন না। যদি ব্যবহার উপযোগী কাপড় রাখেন লোকজন তাহলে নিয়ে যাবেন। সামাজিক কাজ করা শামসুল হক চৌধুরী ফাউন্ডেশনের প্রধান প্রকৌশলী নাছির উদ্দীন চৌধুরী বলেন, মানবতার দেয়ালগুলো বেশির ভাগই উন্মুক্ত থাকে। আমাদের দেশে বৃষ্টির সময়ে এখানে যে কাপড় রাখা হতো তা ভিজে যেত, মানুষ তা ব্যবহার করতে পারত না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এখন প্রায় সবার আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে, যার কারণে পুরাতন কাপড় পরার মতো আগ্রহ নেই। আমাদের ফাউন্ডেশন থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই তা দৃশ্যমান হবে।
দেখা যায়, নগরীর এস এস খালেদ সড়কের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দেয়াল এমনি একটি দেয়াল। দেয়াল থাকলেও দেয়ালে চোখে পড়েনি কোনো কাপড় বা ব্যবহার উপযোগী কোনো কিছু। দেয়ালের নিচে পানি চলাচলের নালা থাকার কারণে অনেক সময় দেখা যায় পুরনো কাপড় পড়ে আছে নালায়। শুধু এই দেয়াল নয়, নগরীর বিভিন্ন মোড় ও স্কুল-কলেজের দেয়ালে থাকা ‘মানবতার দেয়াল’গুলোর এমন বেহাল দশা।
আরো পড়ুন : সেন্ট জোসেফস স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি গর্বিত- সেনাপ্রধান