বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সামনে সড়কে চলছে ভাঙাগড়ার খেলা। ছয় মাস ধরে বিআরটি প্রকল্পের জন্য লুপ তৈরি করা হলেও কাজের ভুলে আবার ভেঙে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারের ভুলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে এ লুপ নির্মাণ করতে আরও তিন মাস সময় লাগবে। এতে যান চলাচলে ভোগান্তিসহ নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিভিল এভিয়েশনের সামনের সড়কটি থেকে বালু, স্ল্যাবসহ সরঞ্জামাদি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। সড়কে থাকা মাটিগুলো ভেকু দিয়ে কেটে কয়েকটি ট্রাকে তোলা হচ্ছে। কোথাও আবার উঁচু-নিচু সমান করতে দেখা যায়। আবার কিছু স্ল্যাব সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কেন সরানো হচ্ছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক কর্মচারী বলেন, এখানে উড়ালসড়কে উঠতে লুপ নির্মাণ করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্মাণে ভুল হয়েছে সে জন্য লুপটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সড়কে থাকা যে বেল্টের ধারণক্ষমতা থাকার কথা ৪৫ টন, সেখানে আছে মাত্র ২৫ টন। প্রকল্পের কর্মকর্তারা সেটি দেখে তা বাতিল করেছেন। এ জন্য ভাঙার কাজ চলছে। আর এই কাজ চলছে ১৫ দিন ধরে। সড়ক নির্মাণে এই ভাঙাগড়ার খেলায় উত্তরা-এয়ারপোর্ট সড়কে যানজট আর ভোগান্তির অন্ত নেই। প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই সড়ক ব্যবহার করা নাগরিকরা দুর্ভোগে পড়ছেন। সড়কে কয়েকটি লেন বন্ধ রেখে নির্মাণকাজ চলায় যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের শুরুতে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে পাঁচ বছর ধরে বিআরটি প্রকল্পের কারণে বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার রাজধানীবাসী। ঢিমেতালে চলা কাজের কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম এই সড়কে চলাচলকারী লাখো মানুষ নিত্যদিন অসহ্য যন্ত্রণা বয়ে চলেছেন। কোনো কোনো দিন ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগছে। অভিজাত আবাসিক এলাকা উত্তরা, শিল্প জোন গাজীপুরসহ ৩২ জেলার লাখো মানুষ নিত্যদিন চলাচলে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন। বিমানবন্দর-জয়দেবপুর করিডরে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। যদিও গত বছর ৮ নভেম্বর টঙ্গী থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কের একাংশ খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে নিচের যানজট কিছুটা কমলেও উত্তরা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দুর্ভোগের অন্ত নেই। মূল সড়কের কয়েকটি লেন বন্ধ করে চলছে প্রকল্পের কাজ। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কবে নাগাদ শেষ হবে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। ভুক্তভোগী একাধিক পথচারী বলেন, ‘ছয় মাস ধরে সড়কের কয়েকটি লেন বন্ধ করে চলছে লুপ নির্মাণের কাজ। কিন্তু ১৫ দিন ধরে আবার দেখছি ভাঙার কাজ চলছে। কী কারণে তারা এসব কাজ করছে তা বলতে পারব না। আমরা এ বিষয়গুলো মাথায় নিই না। আমাদের দরকার যানজটমুক্ত সড়ক। কিন্তু গত কয়েক বছর বিআরটির কারণে দুর্ভোগ-ভোগান্তি আমাদের পিছু ছাড়ছে না। কবে নাগাদ এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাব জানি না।’ এ বিষয়ে বিআরটি প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশনের সামনের বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন লুপটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী লুপের যে ধারণক্ষমতা থাকার কথা সেখানে আমাদের পরীক্ষায় কম এসেছে। এ কারণে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটি আমাদের নয়, ঠিকাদারের ভুল। ঠিকাদার চীন থেকে মেকানিক্যাল স্ট্যাবিলিটি আর্থ (এমএসএ) নিয়ে এসেছেন, যেটাতে ধারণক্ষমতা থাকার কথা অনেক বেশি। কিন্তু লুপে লাগানোর পর পরীক্ষায় দেখা গেল অনেক কম। সে জন্য তারা খুলে ফেলেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কত সেটি আমরা নিরূপণ করিনি। তবে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি ঠিকাদার বহন করবেন। এর প্রভাব প্রকল্পের ওপর পড়বে না।’ এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন করে আবার নির্মাণে তিন মাস সময় লাগবে। কাজের ভুলের প্রভাব পুরো প্রকল্পের ওপর পড়বে না। তবে কিছুটা চাপ পড়বে। প্রসঙ্গত, বিআরটি প্রকল্পের কাজ ২০১২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। আর ২০১৮ সালে পুরোদমে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৮২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করছে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি। বাকি ১৮ ভাগ কাজ কবে শেষ হবে তা অজানা রয়ে গেছে। ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন : নিজের ইচ্ছায় এবার চলচ্চিত্র থেকে অবসরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন শাবানা