চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: বান্দরবানের তুমব্রু জিরো পয়েন্টের অনিবন্ধিত ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা এবার বাংলাদেশের ভিতর ঘাঁটি গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। জিরোপয়েন্টে মিয়ানমারভিত্তিক দুই জঙ্গি সংগঠন ‘আরাকান স্যালভেশন অর্গানাইজেশন (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং অগ্নিসংযোগের পর রোহিঙ্গারা জিরোপয়েন্ট ছেড়ে তুমব্রু এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশ করে তারা তৈরি করছে ঘর। এমন অবস্থায় আতঙ্ক শুরু হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। সংঘর্ষের পর সাধারণ রোহিঙ্গারা আস্তানা ছেড়ে পালিয়ে এলেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়া দুই সন্ত্রাসী গ্রুপ এখনো সক্রিয় রয়েছে জিরোপয়েন্টে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, ‘জিরো পয়েন্টে সংঘর্ষের পর রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আশপাশ এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। এ রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য বিজিবি, পুলিশসহ সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে।’
শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘জিরো পয়েন্টে অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে প্রবেশ করে। কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ফের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। কক্সবাজারের কোনো ক্যাম্পে আর নতুন করে রোহিঙ্গা ধারণের ক্ষমতা নেই। তাই আমরা প্রত্যাশা করছি, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যাবেন।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তাদের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।’ জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মিয়ানমারভিত্তিক দুই জঙ্গি সংগঠন ‘আরসা এবং ‘আরএসও’। এ সময় জিরোপয়েন্টের অনিবন্ধিত ক্যাম্পের ৬৩০ রোহিঙ্গা পরিবারের ৪ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা জিরোপয়েন্ট ছেড়ে মিয়ানমার সীমান্তে ঢুকে পড়ে। কিন্তু পরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ফের বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। বাংলাদেশে ফেরার পর তাদের কেউ কেউ তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পাশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। অনেকে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায়। আশপাশের এলাকায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা খাল, পাহাড় এবং সমতলভূমিতে ত্রিপল, পলিথিন দিয়ে তৈরি করছে ঘর। চেষ্টা করছে নতুন করে ক্যাম্প করার। জিরোপয়েন্টের অনিবন্ধিত ক্যাম্প থেকে সাধারণ রোহিঙ্গারা পালিয়ে এলেও এখনো গুলির শব্দ আসছে। তবে বিভিন্ন সূত্রের দাবি- জিরোপয়েন্টের অনিবন্ধিত ক্যাম্প পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরএসও।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘জিরোপয়েন্ট দুই সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা এবং আরএসও-এর সংঘর্ষ এখনো থেমে থেমে চলছে। তাই সাধারণ রোহিঙ্গারা জিরোপয়েন্ট ছেড়ে বাংলাদেশ অংশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কেউ কেউ তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ কোনাপাড়া খালপাড় ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘খাল পাড় এবং পাহাড়ে অবস্থান নেওয়াদের কেউ কেউ ত্রিপল, পলিথিন এবং বেড়া দিয়ে তাঁবু তৈরি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করার চেষ্টা করছে।’
আরো পড়ুন : চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৫৫ রানে হারিয়ে রংপুর রাইডার্সের দুরন্ত জয়