নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান সামনে রেখে মানুষকে স্বস্তি দিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির জন্য পৃথক দুটি দরপত্রের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে মোট ব্যয় হবে ২৯৪ কোটি ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া এক কার্গো (৬২ হাজার টন) এলএনজি কেনার প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের বাইরে থাকায় কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটিতে গতকাল এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভার পর নিয়মিত ব্রিফিং করার রীতি থাকলেও তা করা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহামুদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, টিসিবির সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৮২ টাকার মধ্যে পড়বে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা টিসিবির ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মোট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে ৫৫ লাখ লিটার এবং স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন সংগ্রহ করা হবে।
সূত্র জানায়, ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের জন্য ১৩ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হলে তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। এতে প্রতি লিটারে অফিশিয়াল দর ১৮২.৯৯ টাকার বিপরীতে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড প্রতি লিটারের দাম ১৮১.৬৫ টাকা, সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড ১৮২.৫৮ টাকা এবং মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ১৮২.৬৮ টাকা উল্লেখ করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করে। প্রতি লিটার ১৮১.৬৫ টাকা হিসাবে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন কিনতে ব্যয় হবে ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই দামে সংস্থাটি ২ লিটারের বোতলে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল টিসিবির গুদামে পৌঁছাবে।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সেই প্রস্তাবের আলোকে টিসিবি কর্তৃক ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের জন্য পিপিআর ২০০৮ অনুসরণ করে ১৫ জানুয়ারি সরবরাহকারী গ্লোবাল করপোরেশনস, টাওয়ার হ্যামলেট, ১৬ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকার কাছ থেকে ২ লিটার পেট বোতলে পরিশোধিত সয়াবিন তেল সরবরাহের জন্য দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। এই ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেলের জন্য প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের অফিশিয়াল দাম ছিল ১৮২.৯৪ টাকা। এর বিপরীতে দরপত্রে গ্লোবাল করপোরেশন ১৭৯ টাকা দাম উল্লেখ করে। পরে নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৭ টাকা নির্ধারিত হয়। সে হিসাবে অফিশিয়াল দামের চেয়ে প্রতি লিটারে ৫.৯৪ টাকা কমে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে ব্যয় হবে ১৯৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দুই লিটারের পেট বোতলে এই সয়াবিন তেল টিসিবির গুদামে সরবরাহ করবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
এদিকে গ্যাস সংকট মোকাবিলায় প্রায় আট মাস পর খোলাবাজার অর্থাৎ স্পট মার্কেট থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে যাচ্ছে সরকার। ফ্রান্সের এলএনজি উৎপাদন করা কোম্পানি টেটাল গ্যাস ৮৫০ কোটি টাকা খরচ করে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো প্রায় ৬২ হাজার টন এলএনজি কিনবে সরকার। জ্বালানি বিভাগ প্রস্তাবটি আজ বুধবার ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন হয়েছে।
এলএনজি প্রতি ইউনিটের দাম ১৯.০০ থেকে ১৯.৭৮ মার্কিন ডলার। আশা করা যায় চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাস সংকট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
এদিকে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের আগে বর্ধিত দাম কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই)। ১৮ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় সরকার। শিল্পে ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে দাম যথাক্রমে ১২ ও ১৬ টাকা ইউনিট থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩০ টাকা। এতে রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির শঙ্কা রয়েছে তাদের। এ জন্য প্রতি ইউনিটের দাম ২৫ টাকা করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছে এফবিসিসিআই। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে এপ্রিল থেকে বর্ধিত দাম কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেড় মাস ভালো সরবরাহের পর বর্তমানে আবারও শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের সংকট বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
আরো পড়ুন : বইমেলায় মুজিব গ্রাফিক নভেল মুজিবের ১০ খণ্ড কিনলেন প্রধানমন্ত্রী