নিজস্ব প্রতিবেদক:,পুরান ঢাকা। বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা চার শ বছরের অধিক কালের এই প্রাচীন জনপদকে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে দেখবেন নতুন প্রজন্মের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। তাঁরা তুলে ধরবেন সেখানকার ঐতিহ্য, মানুষের জীবন ও জীবিকার নানা গল্প, নদীর প্রবহমানতা আর দূষণ। উঠে আসবে মোগল ও ঔপনিবেশিক আমলের স্থাপত্যরীতির নমুনাও। এসব নিয়েই শনিবার রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ গ্যালারিতে এক ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী ‘লার্নিং ফ্রম পুরান ঢাকা’র সূচনা হলো।
ফ্রান্স, ভারতের মুম্বাই ও ত্রিবান্দম এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে স্থাপত্যের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কর্মশালাভিত্তিক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, গ্যেটে ইনস্টিটিউট, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও স্পেন দূতাবাসের মিলিত সংগঠন ‘ইউনিক ক্লাস্টার’।
এ আয়োজনে সহায়তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর আগে ফ্রান্স ও ভারতের দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থাপত্যের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ ধরনের দুটি প্রদর্শনী হয়েছে ভারতে।
এরই ধারাবাহিকতায় এবার ঢাকায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে এবং বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ এতে যুক্ত হয়েছে। এতে চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪৯ জন শিক্ষার্থী এবং ১০ জন শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন। প্রদর্শনীটি চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খেলা থাকবে।
বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক জাকিউল ইসলাম বললেন, শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা দিতেই ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত হয়েছে। সেখানকার মানুষের জীবিকার বিভিন্ন আলোকচিত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এলাকাটির স্থাপনার রেখাচিত্র তৈরি করে এ প্রদর্শনীর সূচনা হলো। শিক্ষার্থীরা এখন প্রতিদিন এসব এলাকায় যাবেন। তাঁরা সেখানে মানুষের জীবিকার বিষয়ে খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করবেন।
যেমন সোয়ারী ঘাটে গিয়ে মাছের পাইকারি বাজার দেখবে। জেলের সঙ্গে কথা বলে জানবে মাছ কোথা থেকে আসে। মাছে যে বরফ দেওয়া হয়, সেই বরফকল কোথায়। খুচরা বিক্রির জন্য কারা কোন কোন এলাকায় এসব মাছ নিয়ে যায় ইত্যাদি। এভাবেই মানুষের জীবন ও জীবিকার গল্প জানার পাশাপাশি স্থানীয় পরিবেশ, সেখানকার ঘরবাড়ি, পথ, স্থাপনা, এখানকার সংস্কৃতি এসব খুঁজবেন অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিয়ে। আর প্রতিদিন সেসব তথ্য ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন আলিয়ঁসের এ প্রদর্শনীতে। এর মধ্য দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের এ প্রাচীন ও দারুণ ব্যতিব্যস্ত জনপদের স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য ইতিহাস, ঐতিহ্য আর জনজীবনের গল্প উঠে আসবে।
প্রদর্শনীর গ্যালারির দেয়ালজুড়ে দেখা গেল বিশাল সাদা বোর্ডে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানের রেখাচিত্র আঁকা। পাশে সাঁটানো হয়েছে এসব এলাকায় মানুষের বিভিন্ন পেশা, বাণিজ্যের পসরার ছবি। যেমন সোয়ারী ঘাটে মাছের পাইকারি বাজার। চকবাজারে আছে বিভিন্ন কুটিরশিল্প, বালুরঘাটের একটি প্রাচীন মসজিদ। মিটফোর্ড হাসপাতাল ঘাটে রাসায়নিক ও সুগন্ধির দোকান। রূপলাল হাউসের সামনে মসলার পাইকারি বাজার। শ্যামবাজারে আছে হরেক রকম সবজির আড়ত। ফরাশগঞ্জে কাঠের কারখানা। জিনজিরা এলাকার বিভিন্ন কলকারখানা ও বাঁশের আড়ত। এসব এলাকা থেকে নতুন কিছু তুলে আনবেন স্থাপত্যের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্য, সুস্বাদু খাবার আর মানুষের আতিথেয়তা নিয়ে পুরান ঢাকা তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে। প্রদর্শনীতে এ দিকগুলো উঠে আসবে।
আলোচনায় অংশ নেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন চার্লস উইটলি, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই, নেদারল্যান্ডসের শার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স থিজ উডস্ট্রা। ফ্রান্সের স্থাপত্যের অধ্যাপক ক্লোডিও সাচি, ভারতের অধ্যাপক ঋতু দেশমুখ, স্থপতি কমলিকা বোস ও বুয়েটের অধ্যাপক জাকিউল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের পরিচালক ফ্রাসোয়া খোজঁ।
আরো পড়ুন : দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ এক গোল করেই দলকে পিএসজির জয় দিলেন মেসি