আফগানিস্তানের পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পরবর্তী মহাসচিব নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন মহাসচিব হিসেবে বাংলাদেশের মনোনীত কূটনীতিক যোগ দেওয়ার আগে পদটি কয়েক মাসের জন্য খালি থাকছে। সেই সময় পর্যন্ত বর্তমান মহাসচিব ইসালা রুয়ান ভিরাকুনকে স্বপদে বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়েছে নেপাল।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, সার্কের বর্তমান সভাপতি হিসেবে নেপাল গত বৃহস্পতিবার জোটের মহাসচিবের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানায়। বর্তমান মহাসচিব ইসালা রুয়ান ভিরাকুনের মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। তিনি শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রসচিব।
আটটি দেশ নিয়ে সার্ক প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত দুজন বাংলাদেশি কূটনীতিক জোটটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সার্কের প্রথম মহাসচিব হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আবুল আহসান ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মহাসচিব ছিলেন সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক কিউ এ এম কে রহিম।
সার্ক সনদ অনুযায়ী, সদস্যদেশের নামের ইংরেজি আদ্যক্ষরের ক্রমানুসারে সার্কের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন ওই দেশের সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিকেরা। সে হিসাবে শ্রীলঙ্কার পর এবার আফগানিস্তানের কারও মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। তবে দেশটিতে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি কোনো দেশ। ফলে ২০২১ সালের পর থেকে আফগানিস্তানকে সার্কের কোনো সভায় ডাকা হচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে ইসালা রুয়ান ভিরাকুনের মেয়াদ শেষে কে পরবর্তী মহাসচিব হচ্ছেন, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
কাঠমান্ডুর কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন মহাসচিবের নিয়োগ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা সংস্থার ২৬ বছরের ইতিহাসে প্রথম। সার্কের বর্তমান সভাপতি হিসেবে নেপাল গত সেপ্টেম্বর থেকে এ সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়।
নেপালের পররাষ্ট্রসচিব ভরত রাজ পাদুয়াল উদ্যোগী হয়ে আফগানিস্তান ছাড়া সংস্থার বাকি সাত দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের সঙ্গে টেলিফোনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
নেপালের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে আফগানিস্তান থেকে কাউকে মহাসচিব নিয়োগে জটিলতা রয়েছে। নেপালের ওই যুক্তি সদস্যদেশগুলো মেনে নেয়। পরে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় যে, সার্কের পরবর্তী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশের কেউ। এখন বাংলাদেশ তিন বছরের জন্য মহাসচিব পদে একজনকে মনোনীত করবে।
সার্কের মহাসচিব পদে মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশের একজন কূটনীতিককে মনোনীত করা হবে। পরে মনোনীত ব্যক্তির বিষয়টি কাঠমান্ডুর সার্ক সচিবালয়কে জানানো হবে। যেহেতু বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে পরবর্তী মহাসচিব পদে নিয়োগের বিষয়ে সদস্যদেশগুলোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই নতুন করে সদস্যদেশগুলোর মতামত বা অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।
১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় জোটটির। দুই বছর পর; অর্থাৎ ১৯৮৭ সালে সার্কের সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বাংলাদেশের আবুল আহসানকে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৃহৎ দেশ—ভারত ও পাকিস্তানের বৈরিতায় এগোতে পারেনি সার্ক। ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাঠমান্ডুতে জোটের সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আরো পড়ুন : সবার নজর যুক্তরাষ্ট্রের আকাশের বেলুন–কান্ডের দিকে