১৮ ফেব্রæয়ারি, শনিবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর শেখ রাসেল টিএসসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত¡ সমিতি (পিবিজিএসবি) এর ২য় আর্ন্তজাতিক ও ১২তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে কেনাফ ও মেস্তার উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আল-মামুনকে ইয়ং সাইন্টিস্ট এ্যাওয়ার্ড ২০১৯ সম্মাননা প্রদান করা হয় ।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত¡ সমিতি এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর যৌথ উদ্যোগে ÒPlant Breeding Transformation in Changing ClimateÕÕ মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশ থেকে আগত উদ্ভিদ প্রজননবিদগণ। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্ত¡ শাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণসহ প্রায় সাত শতাধিক উদ্ভিদ প্রজননবিদ অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তিনি সকলকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করার অনুরোধ জানান। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য গবেষণার মাধ্যমে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা। সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ উদ্ভিদ প্রজনন এবং কৌলিতত্তে¡ অসামান্য অবদানের জন্য স্বীকৃত প্রজননবিদগণ ও প্রতিনিধির মাঝে ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করেন প্রধান অতিথি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে এফএও এর এসিষ্ট্যান্ড কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিভ ড. নুর এ খন্দকার। পিবিজিএসবি এর সভাপতি ড. মোঃ আজিজ জিলানী চৌধুরী এর সভাপতিত্বে উক্ত সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য ও সম্মেলনের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিবিজিএসবি এর সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এ. কে. এম. আমিনুল ইসলাম।
দুই দিনব্যাপী আয়োজিত উদ্ভিদ প্রজননবিদদের আন্তর্জাতিক এ মিলনমেলায় ৫টি টেকনিক্যাল সেশনে দেশী ও বিদেশী প্রথিতযথা প্রজননবিদগণ বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ৩৩টি লাগসই গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করবেন। এছাড়া বাছাইকৃত ৬০টি গবেষণালব্ধ ফলাফল পোস্টারের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের নিকট উপস্থাপন করা হবে।
কৃষিবিদ আল-মামুন ১৯৭৯ সালে বরগুনা জেলার বামনা উপজলোয় জম্মগ্রহন করনে। আলহাজ্ব মোঃ আশ্রাফ আলী হাওলাদার এবং মিসেস সেলিনা বেগম এর মেঝো সন্তান কৃষিবিদ আল-মামুন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক এবং তাঁর সহধর্মিনী মিসেস কামরুন্নাহার। শান্ত, সরল ও সদালাপি তরুন এ বিজ্ঞানী ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত। উল্লেখ্য প্রজননবিদ আল-মামুন এর প্রজ্ঞা ও গবেষণায় অভিজ্ঞতার আলোকে ২০১৭ সালে বিজেআরআই কেনাফ-৪ (লাল কেনাফ) ও বিজেআরআই মেস্তা-৩ (মসৃণ মেস্তা) এবং ২০২২ সালে বিজেআরআই মেস্তা-৪ (সবজি মেস্তা-২) নামে তিনটি নতুন জাত বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়েছে, যা এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত জাতসমূহ থেকে সম্পূর্ন আলাদা এবং পূবের্র জাতসমূহ থেকে কৃষকের নিকট অধিক পছন্দনীয়।
কৃষিবিদ আল-মামুন ২০২২ সনে ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া, সেরডাং, সেলানগর থেকে কৌলিতত্ত্ব ও প্রজনন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি শেরেবোংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে ২০০৪ সনে বিএসসিএজি (অনার্স) এবং ২০০৮ সালে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রজনন বিভাগের জাত উন্নয়ন ও বীজ গবেষণায় উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি কৃষিবিদ আল-মামুন একজন লেখক ও প্রাবন্ধিক। তাঁর প্রকাশিত জনপ্রিয় কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের সংখ্যা সত্তরের উপরে। তিনি জাতীয় দৈনিক ছাড়াও মাসিক কৃষিকথা, কৃষিকাগজ ও উন্নয়ন বির্তকসহ বিভিন্ন জার্নালের নিয়মিত লেখক। দেশে বিদেশে তাঁর প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ৩৭টি এবং প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩টি। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবত তিনি আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন জার্নালের পর্যালোচক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন সফল সংগঠক হিসেবে দেশে-বিদেশে বহু সোসাইটি এবং পেশাজীবি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।
সম্মেলনে কৃষিবিদ ড. আল-মামুন এর পাশাপাশি উদ্ভিদের কৌলিসম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ জেনেটিক রিসোর্সেস সেন্টারের উধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ রেজওয়ান মোল্লাকে ইয়ং সাইন্টিস্ট এ্যাওয়ার্ড ২০২০ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও জীবপ্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ-ই-আলমকে উদ্ভিদ প্রজনন এ্যাওয়াডর্স ২০১৯ প্রদান করা হয়। উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক (গবেষণা) প্রয়াত ড. তমাল লতা আদিত্যকে উদ্ভিদ প্রজনন এ্যাওয়ার্ড ২০২০ প্রদান করা হয়।
আরো পড়ুন : নিবন্ধন পেতে দ্বিতীয় বাছাইয়ে টিকেছে ৬০টিরও বেশি দল