শুরুটা হয়েছে উসমান খাজাকে দিয়ে, শেষ করলেন ম্যাথু কুনেমান। দিল্লি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ছয়জন ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন সুইপ শট খেলতে গিয়ে। স্পিনারদের জন্য সহায়ক উইকেটে দ্রুত রান তোলার যে কৌশল অস্ট্রেলিয়া বেছে নিয়েছিল, সেই কৌশলই বুমেরাং হয়েছে তাদের জন্য।
ম্যাচসেরা রবীন্দ্র জাদেজা ম্যাচ শেষে তো স্পষ্ট করেই বলেই দিলেন—এই ধরনের উইকেটে তাঁর বিপক্ষে সুইপ খেলা মোটেই আদর্শ কোনো শট নয়। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও ক্রিকেটারদের শট নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
১ উইকেটে ৬১ রান নিয়ে তৃতীয় তিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া আজ সকালে ৫২ রান তুলতেই হারিয়েছে ৯ উইকেট। রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ২৮ রান করতেই হারিয়েছে শেষ ৮ উইকেট। ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৫ রান। সহজ এ লক্ষ্য টপকাতে ভারতকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি।
শুরুতে লোকেশ রাহুল, এরপর রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়াররা আউট হলেও ভারত ম্যাচ হারতে পারে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভারত জিতেছে ৬ উইকেট। প্রথম টেস্টের মতো এই টেস্টেও তিন দিনের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়াকে হারাল ভারত। এটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সব সংস্করণ মিলিয়ে ভারতের শততম জয়।
সাদা চোখে দেখলে মনে হতে পারে রবীন্দ্র জাদেজার কাছেই হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে সংখ্যা আর ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় আনলে তাঁর সঙ্গে যোগ করতে হবে অক্ষর প্যাটেল ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের নামও। কারণ প্রথম ইনিংসে ভারতের রান যখন ৭ উইকেটে ১৩৯, ২৬৩ রান করা অস্ট্রেলিয়া তখন স্বাভাবিকভাবে বড় লিডের কথাই ভাবছিল।
তবে অশ্বিন ও অক্ষর জুটি তা হতে দেয়নি। রোহিত, চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলিরাই যেখানে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনারদের জবাব দিতে পারেননি, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার পথের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অক্ষর ও অশ্বিন। এই দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের ১১৪ রানের জুটির কারণেই প্রথম ইনিংসে ১ রানের বেশি লিড নিতে পারেনি কামিন্সের দল। প্রথম টেস্টে ফিফটির পর এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন অক্ষর। অশ্বিন করেছেন ৩৭ রান।
দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করে ১২ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলে ৬১ রান। এবার অস্ট্রেলিয়ার সামনে ভারতকে বড় রানের লক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ ছিল। এখানেও একটা জুটি অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। দুটি জুটিতে মিল এক জায়গায়—অশ্বিন।
ব্যাট হাতে যে ভূমিকাটা রেখেছেন অক্ষর, বল হাতে সেই ভূমিকাই নিয়েছেন জাদেজা। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো এই দুই স্পিনার মিলেই তুলে নিয়েছেন প্রতিপক্ষের এক ইনিংসের ১০ উইকেট। এর আগে যা করেছিলেন ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
আজ সকালে হাতে থাকা ৯ উইকেটে মাত্র ৫২ রান তুলতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার শেষ ৭ উইকেটের ৬টিই জাদেজার। ৪২ রানে ৭ উইকেট জাদেজার ক্যারিয়ার-সেরা। টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো তাঁর ৭ উইকেট। এর আগে যা নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১৬ সালে চেন্নাইয়ে (৭/৪৮)। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা।
নাগপুর টেস্টে হারার পর আরও উন্নতি করার কথা বলেছিলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তিন দিনে হারলেও আগের টেস্টের চেয়ে ভালোই লড়াই করেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে ম্যাচে এগিয়ে থেকেও এমন হারে কষ্টটা একটু বেশি কামিন্সের, ‘২৬০ রান প্রথম ইনিংসে ভালোই স্কোর ছিল। হতাশ, এগিয়ে থেকেও ম্যাচটা হাত ফসকে গেল। আমরা এই ম্যাচে এগিয়ে ছিলাম, ভারতের মাটিতে সাধারণত এটা ঘটে না। এই হারটা তাই কষ্ট দিচ্ছে।’
আরো পড়ুন : সাহস লাইব্রেরি পেলো জাতীয় শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার পুরস্কার ২০২৩