লেখা: মোশাররফ শাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হকের পা টেপানোর ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নেতা তিনি। ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকা অন্তত ২০০ নেতা তাঁর চেয়ে ১০ থেকে ১৪ বছরের ছোট। ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা বয়সের এ পার্থক্যকে ‘হাঁটুর বয়সী’ বলে দাবি করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, সম্প্রতি পা টিপিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসা রেজাউল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ছিলেন চতুর্থ শ্রেণিতে। বর্তমানে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে। আর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শেষ। কয়েক মাসের মধ্যে তাঁদের স্নাতকোত্তর শেষ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে সদস্য আছেন ৩৭৬ জন। কমিটির সদস্যদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কমিটিতে ২০১৫ থেকে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের নেতা আছেন অন্তত ২০০ জন। তাঁরা সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক, উপসম্পাদক, সহসম্পাদক ও সদস্য পদে আছেন।
কমিটিতে বয়সে জ্যেষ্ঠ নেতা রেজাউল হক। কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আছেন। তাঁর শিক্ষাবর্ষ ২০২০-২১। অর্থাৎ রেজাউলের সঙ্গে ব্যবধান ১৪ বছরের। রেজাউল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, তখন জান্নাতুল বর্ণমালা শিখছিলেন। বর্তমানে তিনি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষে (পুরোনো) অধ্যয়নরত। বিভাগে জট না থাকলে দ্বিতীয় বর্ষে থাকতেন তিনি।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হাতেই থাকার কথা। তবে কীভাবে অছাত্ররা এ পদে আছেন, সেটি কেন্দ্রীয় কমিটির দেখা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য আবদুল্লাহ আল জোবায়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, সভাপতি রেজাউল হক যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, তখন সবে প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
রেজাউল হকের দাবি, সম্প্রতি তাঁর ছবি যাঁরা প্রকাশ করেছেন, তাঁরা শতভাগ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে কলুষিত করতে এ ধরনের নোংরা কাজগুলো করা হয়েছে। যাঁরা এ ছবি ছড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
জোবায়ের বলেন, ‘আমি নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ছাত্রলীগের দায়িত্বে এসেছি এবং এটিই হওয়া উচিত। বয়স ও ছাত্রত্বের মধ্যে এই সমন্বয় করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। কেন অছাত্র আছেন, এটি বোধগম্য নয়।’
ছাত্রত্ব না থাকা ও বছরের পর বছর হল দখল করে আছেন রেজাউল হক। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনা যায়, সেভাবে তিনি কাজ করছেন। আপাতত এসব বিষয় নিয়ে ভাবছেন না।
ফজলে রাব্বী বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় তিনি নিয়মিত ছাত্র ছিলেন। রেজাউল দায়িত্বে আছেন বলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আদর্শিক চর্চা হচ্ছে না। হলগুলোতে পড়ালেখার কোনো পরিবেশ নেই। এগুলো এখন মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। যদি নিয়মিত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব থাকত, তাহলে হলগুলোতে পড়াশোনার পরিবেশ থাকত। ছাত্রনেতারা গবেষণা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতেন।
ফজলে রাব্বী আরও বলেন, ‘রেজাউল হক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো ভালো কাজ করেছেন বলে আমরা শুনিনি। রেজাউলের হাঁটুর বয়সের শিক্ষার্থীরাই বা কেন তাঁর সঙ্গে রাজনীতিতে আসবেন। এ কারণে ভালো শিক্ষার্থীরা এখন আর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আসেন না।’
রেজাউল হকের দাবি, সম্প্রতি তাঁর ছবি যাঁরা প্রকাশ করেছেন, তাঁরা শতভাগ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে কলুষিত করতে এ ধরনের নোংরা কাজগুলো করা হয়েছে। যাঁরা এ ছবি ছড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
রেজাউল হক ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফজলে রাব্বী। তিনিও ক্যাম্পাসে মহিবুলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৫ সালের ২০ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আরো পড়ুন : তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাক কোম্পানির অর্থায়ন!