আওয়ামী লীগ নেতাদের টাকা লুটপাটের নমুনা, সড়ক ছাড়াই ব্রিজ-কালভার্ট

অনুসন্ধানী অর্থনীতি দুর্নীতি প্রচ্ছদ রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

রাঙামাটি প্রতিনিধি : লংগদুর আটারকছড়া ইউনিয়নে কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এর পর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি এর নির্মাণকাজ

রাঙামাটির সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর মন রক্ষার্থে ২০১১ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা একটি ব্রিজ নির্মাণকাজ হাতে নেন। এক যুগ পার হলেও ব্রিজের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ৩০ লাখ টাকার কাজ দেখিয়ে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হলেও পরবর্তী অর্থবছরে ওই ব্রিজ নির্মাণে আরও ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

‘লংগদু উপজেলাধীন আটারকছড়া ইউনিয়নে করল্যাছড়ি বাজার রাস্তার শহীদের বাড়ি হতে মিজানের বাড়ির মাঝে ব্রিজ নির্মাণ’ নামে প্রকল্পটি হাতে নেয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তা কোড নম্বর ৫০১০ প্রকল্পের তালিকায় ৫৭ নম্বর ক্রমিকে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা লেখা রয়েছে ২০১১-২০১৫ সাল। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারায় প্রকল্পটিতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো হয়। ওই ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে কোটি টাকার ওপরে ব্যয় হলেও কাজ শেষ না করে ফেলে রেখেছিলেন মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর আত্মীয় ঠিকদার রহিম খান।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুন মাসের উন্নয়ন প্রকল্পের মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে ১ জুলাই, ২০১১ হতে ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত ওই প্রকল্পে ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ব্রিজের কাজ শেষ হয়নি, তবে ঠিকাদাররা ঠিকই টাকা তুলে নিয়েছে। কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন শুধু নিজেদের পকেট ভারী করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, ‘আমি এবং আমার বোন জেবুন্নেসা রহিমের জামাই রহিম খান দুজনে কাজটি নিয়েছি। ব্রিজের কাজ শুরুর আগে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে পাহাড় কেটে রাস্তা বানাতে হয়েছে। লাভ তো দূরের কথা, বরং অনেক টাকা লোকসান দিয়েছি। জেলা পরিষদের খামখেয়ালীপনার কারণে ব্রিজের কাজ শেষ হয়নি।

তবে লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমপি চিনুর অবহেলার কারণে ব্রিজের কাজটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবার ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু দাশ এ কাজটি নিয়েছেন বলে জানান ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

ব্রিজ নির্মাণ বিষয়ে বাবু দাশ জানান, এখন ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরু হয়েছে। ১ কোটি টাকার মধ্যে আমাদেরকে মাত্র ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ব্রিজের পাশাপাশি সংযোগ সড়কের কাজও আমরা করছি। দীর্ঘদিন ব্রিজের কাজটি ফেলে রাখা হয়েছিল। আশা করছি, আগামী বছর কাজটি সম্পন্ন হবে।

এক যুগ পরও ব্রিজের কাজ কেন শেষ হয়নি জানতে চাইলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, জনস্বার্থে ব্রিজ নির্মাণের কাজটি হাতে নিয়েছিলাম। ঠিকাদার সময়মতো কাজ করেনি। আমার পরে বৃষকেতু চাকমা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। তিনি ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করতে কোনো উদ্যোগ নেননি।

এ বিষয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা বলেন প্রথমত, প্রকল্প হাতে নেওয়ার সঠিকভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি অর্থাৎ মাস্টার প্ল্যান যাকে বলে সেভাবে প্ল্যান করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, কাজ নেওয়ার আগে ঠিকদাররা জায়গা পরিদর্শন না করেই কাজ নেয়। এসব কারণে বছরের পর বছর প্রকল্প অবাস্তবায়িত থেকে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু ওই একটি ব্রিজ নয়, আরও বেশকিছু ব্রিজ, কালভার্ট, সড়ক ও স্থাপনার কাজের টাকা লোপাট করে অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছেন লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ও তাদের সহযোগীরা। এর মধ্যে আটারকছড়া ইউনিয়নের কালু মাঝির টিলা এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুর কাজ ৮-১০ বছরেও শেষ করেননি রাঙামাটি জেলা যুবলীগের নেতা ঠিকাদার শাহ নজরুল ইসলাম। উপজেলার মাইনীমুখ ইউনিয়নের পূর্ব জারুল বাগানের সঙ্গে পশ্চিম জারুল বাগানের যোগাযোগের জন্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করে ফেলে রেখেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বারেক সরকার ও তার ছেলে এরশাদ সরকার।

লংগদু উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তা থেকে বাইট্টাপাড়া বাজার পর্যন্ত পিচঢালা রাস্তা বর্ধিতকরণ ও সংস্কার কাজটিও অসমাপ্ত রেখেছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি চান মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক মেম্বার ও জিয়া মেম্বার। মুঠোফোনে জিয়া মেম্বার বলেন, পরিস্থিতির কারণে আমরা বর্তমানে এলাকা ছেড়ে দূরে অবস্থান করছি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে কাজ শুরু করে রাস্তা সংস্কারের কাজটি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন : উদ্ভূত পরিস্থিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন আজহারী

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *