স্টাফ রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এখনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে অংশ নেয়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। দলগুলো বলেছে, পরিবেশ অনুকূলে না আসায় আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা আছে। বৈঠকে অংশ নেয়া বেশির ভাগ দল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছে। কেউ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। আবার কেউ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছে। এদিকে আমন্ত্রিত ৪৪ দলের মধ্যে ২৬টি দল অংশ নিলেও ১৮টি দল সংলাপ বর্জন করেছে। এর আগের সংলাপে বিএনপিসহ ৯টি দল অংশ নেয়নি। ওদিকে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য দলগুলোকেই উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সভা শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেছেন, সংবিধান সম্মতভাবেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে।
তৃণমূল বিএনপি মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, আমরা ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা চাই একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ।
নির্বাচন কমিশন আমাদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আমরা সেগুলো পর্যবেক্ষণ করবো। আমরা দেখবো যে তারা বাস্তবিক পক্ষে জনগণকে আস্থায় আনার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তো হবেই। সেটি জনগণের প্রত্যাশা। কিন্তু আমরা চেয়েছি নির্বাচনে যেন সকল দল অংশগ্রহণ করে। কোনো কোনো দল যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, সিইসি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দায়িত্ব চাপিয়েছেন।
আমাদের বক্তব্য হলো-আকাশ থেকে হযরত জিব্রাইল (আ.) এর নেতৃত্বে বিশাল ফেরেশতা বাহিনী যদি পাঠানো না হয়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব নয় আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীর মোকাবিলা করে পোলিং সেন্টারে টিকে থাকা। রাজনৈতিক ঐক্যমত সৃষ্টি হওয়া না পর্যন্ত এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা স্থগিত রাখতে হবে।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, আমরা বলেছি-২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন আগামীতে বাংলাদেশের মানুষ আর দেখতে চায় না। মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন আবারো হলে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ নির্বাচন বর্জন করবে।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, আমরা বলেছি, ভোটকেন্দ্র দলীয় প্রভাবমুক্ত হতে হবে এবং প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা, ডিসিদের পরিবর্তে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের করার প্রস্তাব দিয়েছি।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা বলেছি নির্বাচন কমিশনের কাজ হলো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা। নির্বাচন হবে কমিশনের অধীনে, কোনো সরকারের অধীনে নয়।
ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের মহাসচিব শেখ রায়হান রাহাবার বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি- আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হোক। বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া হোক। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হোক এবং ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হোক।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান কাজী মহসিন চৌধুরী বলেন, দেশে অবরোধ চলছে, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলছে। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য।
গণফোরামের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন- বর্তমানে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ দেশে নেই। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পূর্ব মুহূর্তে একটি দলের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যদিবালোকে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। প্রশাসন নগ্নভাবে বিরোধী দলের সমাবেশে হস্তক্ষেপ করেছে।
গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সরকার চাই। এটি না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয় এবং এই নির্বাচনে যাতে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে অর্থবহ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক ধারা কীভাবে অব্যাহত রাখা যায় এবং সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের সকল রাজনৈতিক শক্তি কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই ব্যাপারে আমরা ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অতীতের নির্বাচনগুলোতে নির্বাচনী বিধি-বিধান যেভাবে ভঙ্গ করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করতে হবে। এ ছাড়া দেশের মানুষ যাতে ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা কমিশনকে নিতে হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য দলগুলোকেই উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, সেই সংকট নিরসন করার সামর্থ্যটা আমাদের নেই বা আমাদের সে ম্যান্ডেটও নেই। আমরাও বলেছি-আপনারাও নিজেদের মধ্যে চেষ্টা করতে পারতেন। দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, আমাদের নির্বাচন বিষয়ে আমাদের রাজনীতিতে বিদেশিরা এসে অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন। অথচ আপনারা দিতে পারছেন না। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনারা নেতৃবৃন্দ হিসেবে এ দায়িত্বটা নিতে পারতেন। বারংবার চেষ্টা করতে পারতেন নিজেদের মধ্যে সংলাপ করে একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে।
সিইসি বলেন, আলোচনায় এ যাবৎকালের প্রস্তুতি অবহিত করা, মতামত গ্রহণ করা ও আমরাও মতামত জানিয়েছি। ২৬টি দল আলোচনায় অংশ নিয়েছে। আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল। পরিবেশ নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন; অধিকাংশই আমাদের অবস্থানটা বুঝেছেন; নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়, কিছু কিছু দল এখনো অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, আমাদের স্পেস এবং টাইমটা সীমিত। আমরা কিন্তু অনেক বেশি স্পেস নিয়ে কাজ করতে পারি না। আমাদের জন্য সময়সীমা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান থেকে সবসময় বলে এসেছি- আমরা সব রাজনৈতিক দল, বিএনপিও; আমাদের আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে উনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক। নির্বাচন যথাসময়েই হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের নির্বাচন করবো। তাদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে-আপনারা আসুন। কীভাবে আসবে, সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারবো না।
আরো পড়ুন : পারিবারিক কলহের জেরে তিন শিশু সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলেন মা