উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে আরো এক রোহিঙ্গা নিহত, চার কৃষককে অপহরণ

ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ পুরুষ পুরুষ অধিকার প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

বিশেষ প্রতিনিধি: কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে আরো এক রোহিঙ্গা নেতা (সাব মাঝি) নিহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার ভোরে উখিয়া বালুখালী ৮ ইস্ট শিবিরে এ ঘটনা ঘটে। একই দিন টেকনাফের পাহাড়ে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা চার কৃষককে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, গত বছরের জুন থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৭টি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে টেকনাফের নাফ নদ তীরবর্তী হ্নীলা ও মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন বাহারছড়া ইউনিয়ন দুটিতে গত দুই মাসে কমপক্ষে ২৫ জন স্থানীয় লোক অপহরণের শিকার হয়েছে। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ও বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন এসব তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, অপহরণের বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় লোকজন সাধারণত থানায় যেতে চায় না। কারণ এসব ঘটনা মুক্তিপণ দিয়েই সমাধা করা হয়।

উখিয়া থানার ওসি জানান, গতকাল গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা মোহাম্মদ সেলিম (৩৫) উখিয়া উপজেলার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের বি-ব্লকের আবদুস সোবহানের ছেলে। তিনি ওই শিবিরের বি-ব্লকের সাব মাঝি।

ওসি বলেন, আরসা নামধারী একদল দুষ্কৃতকারী মাঝি সেলিমকে ভোরে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিতে হত্যা করে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

উখিয়ার বালুখালী কতুপালং শিবির-৮-এর মোহাম্মদ জাফর বলেন, ‘নিহত সাব মাঝিসহ অন্যরা শিবিরটিতে ‘আরসা’ বিরোধিতায় সব সময় সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে সেখানে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি জানান, শিবিরে সন্ত্রাসী দল আবারও সক্রিয় হয়েছে। ফলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে শিবিরে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ নিয়ে শিবিরের লোকজন ভয়ভীতির মধ্য রয়েছে।

এর আগে শনিবার রাত ৮টার দিকে উখিয়ার জামতলী শিবিরে একদল মুখোশধারীর ছুরিকাঘাতে রশিদ আহমদ (৩৬) নামের এক রোহিঙ্গা নেতা নিহত হন।

এদিকে টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, চার কৃষক অপহরণের খবর পেয়েই থানার ওসি আবদুল হালিম ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ আগে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের আটজন স্থানীয় বাসিন্দা পাহাড়ি ছড়ায় মাছ ধরতে গিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। চার দিন পর ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ঘরে ফেরেন তাঁরা।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, অপহরণের খবর পেয়ে তিনি ও থানার ওসিসহ স্থানীয় লোকজন নিয়ে পাহাড়ে খোঁজ করেছেন। কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি। অপহরণকারীরা গতকাল বিকেল পর্যন্ত অপহূতদের স্বজনদের কাছে মুক্তিপণও দাবি করেননি। অপহৃত চারজন হলেন ওই ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং গ্রামের আবুল হোছনের ছেলে আবদুস সালাম, ছৈয়দ হোসেন ওরফে গুরা মিয়ার ছেলে আবদুর রহমান, রাজা মিয়ার ছেলে মুহিবুল্লাহ ও ফজলুল করিমের ছেলে আবদুল হাকিম। তাঁরা সবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা চালান বলে জানা গেছে।

আবদুস সালামের বড় ভাই মুনশি রফিক জানান, পাহাড়ের পাদদেশে তাঁদের ক্ষেতের জমি আছে। যেখানে প্রায় প্রতিদিন পাহাড় থেকে হাতি নেমে ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে ফেলে। তাই হাতি থেকে ক্ষেত রক্ষায় শনিবার রাতেই পাহাড়ে যায় চারজন। কিন্তু প্রতিদিনের মতো ভোরে ফিরে আসার কথা থাকলেও সকাল ১০টা পর্যন্ত চারজনের কেউ বাড়ি ফেরেননি। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন : কাশিমপুর কারাগারে ৪১৭ নম্বর কয়েদির ফাঁসি কার্যকর

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *