ড্রোন দিয়ে তোলা একটি ছবিতে ১০টি ভবনের চিহ্ন দেখা যায়। তবে সেগুলো এখন ধ্বংসস্তূপ। কোনোটি মিশে গেছে মাটিতে, আবার কোনোটি বিধ্বস্ত। এ অবস্থা মধ্য গাজার পৌরসভা আল-জাহরার। শুধু এখানেই নয়, উত্তর গাজার অধিকাংশ আবাসিক ভবন বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। ফের বর্বর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে তেল আবিব। যে কারণে উত্তর গাজার আল-কুদস হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, হাসপাতালটিতে অন্তত ৪০০ রোগী ও আহত ফিলিস্তিনিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। বসতভিটা হারানো ১ হাজার ২০০ বাসিন্দাও আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
এদিকে, দ্বিতীয় দফায় আরও কমেছে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর পরিমাণ। গতকাল রোববার রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মাত্র ১৭ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করে। যদিও জাতিসংঘ বলছে, গাজার বাসিন্দাদের জন্য প্রতিদিন অন্তত ১০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন। ত্রাণ নিয়ে বহু ট্রাক সীমান্তে অপেক্ষা করলেও অনুমতি দিচ্ছে না ইসরায়েল। এবার পাঠানো ত্রাণের মধ্যে ওষুধই বেশি। খাবারের পরিমাণ কম। এবারও কোনো জ্বালানি প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি গাজায়। অবশ্য, ত্রাণ পাঠানো অব্যাহত রেখেছে অনেক দেশ। রোববার তুরস্ক, কাতারসহ বিভিন্ন দেশ সহায়তা সামগ্রী পাঠিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এই সাহায্য শুধু দক্ষিণ গাজার জন্য। উত্তর গাজায় যাবে না। উত্তর গাজা থেকে সব বাসিন্দাকে ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থল ওয়াদি গাজার দক্ষিণে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল। তবে দক্ষিণ গাজায়ও বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউ) গাজার পরিচালক টমাস হোয়াইট বলেছেন, এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো জ্বালানি। ১৭ ট্রাকে কোনো জ্বালানি নেই উল্লেখ করে ফিলিস্তিন ও মিসরের মধ্যে স্থাপিত রাফাহ ক্রসিং গেটে তিনি বলেন, আর মাত্র তিন দিনের জ্বালানি আছে গাজায়। এর পর বন্ধ হয়ে যাবে সবকিছু। তবে এএফপি জানায়, গতকাল ৬ ট্রাকে জ্বালানি ছিল।
ইনকিউবেটরে ১২০ নবজাতক ঝুঁকিতে
এদিকে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় গাজার হাসপাতালের ইনকিউবেটরে অন্তত ১২০ নবজাতকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইউনিসেফের মুখপাত্র জোনাথন ক্রিকক্স বলেছেন, এ অবস্থায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুয়ী, ইসরায়েলি হামলায় এরই মধ্যে ১ হাজার ৮৭৩ শিশু নিহত হয়েছে।
নিহত বেড়ে ৫৬৫১
গাজার বিভিন্ন অংশে গতকালও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে আরও ৫৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ হাজার ৬৫১ জনে। নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। গাজার পরিস্থিতিকে বিপর্যয়কর বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, ইসরায়েলে মৃত ১ হাজার ৪০৫ জন।
৩১ মসজিদ ধ্বংস
মসজিদ-গির্জায়ও হামলা চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৩১টি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। মসজিদে হামলার কথা স্বীকারও করেছে ইসরায়েল। রোববার ভোরে অধিকৃত পশ্চিম তীরের আল-আনসার মসজিদে হামলায় হামাস ও ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদের বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে ইসরায়েলি বাহিনী। মসজিদটি কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে দাবি তাদের। এ ছাড়া গাজানের একটি গির্জায় বিমান হামলা হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসম্যান জাস্টিন আমাশ বলেছেন, ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অনেক সহ্য করেছে। আমাদের পরিবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। গাজায় প্রায় ১ হাজার খ্রিষ্টান রয়েছেন। হামলার মধ্যেও দখল অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের পুরোনো অন্তত ৭০টি জলপাই গাছ ধ্বংস করেছে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা। অন্যদিকে, আরও ৫৮ জনসহ ৭২৭ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে, হামাসের হাতে বন্দির সংখ্যা আরও দু’জন বাড়িয়েছে তারা। ২১২ জনকে বন্দি করা হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলি বাহিনীর।
হাসপাতালে লাশের স্তূপ
রোববার প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে অনেক মানুষ মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ হাসপাতালে যান। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে দেইর এল-বালাহ অন্যতম। এখানে ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। হাসপাতালটিতে ছিল লাশের স্তূপ।
এদিকে, ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববার বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তান, ফ্রান্স, কারাকাস, তিউনিসিয়া, মন্টিনিগ্রো, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাসহ বিভিন্ন দেশে। অন্যদিকে, জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে ইসরায়েলিরা। সূত্র: আলজাজিরা, বিবিসি।
আরো পড়ুন : ছাত্রলীগের নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে রাবিতে অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ