স্টাফ রিপোর্টার: নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠির পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। তিনি মনে করেন ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে বিশ্ব নেতারা যে বিবৃতি দিয়েছেন তার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ বলেন, গত রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেয়ার একটি সিদ্ধান্ত আমাদের প্রাইভেট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানানো হয়। যেখানে সোমবার বিকাল ৪টার মধ্যে বিবৃতি স্বাক্ষর করার কথা বলা হয়। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাক্ষর করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি স্বাক্ষর করার সঙ্গে একমত নই। আমি মনে করি ড. ইউনূসের বিষয়ে যে বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি দেয়া হচ্ছে সেটির প্রয়োজন নেই। আর আমি মনে করি উনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে তা অন্যভাবে ডিল করা যেত। এটা এক প্রকারের প্রেশারে রাখার জন্যই করা হচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে।
অধ্যাপক ড. ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জনের বেশি নোবেল বিজয়ী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন যে- উনাকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। আমি ওই বিবৃতির সঙ্গে একমত। সেজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই বিবৃতিতে আমি স্বাক্ষর করবো না। কারণ জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইসরাইলের অ্যাটর্নি জেনারেল ইসরাইলের যে আইন সংস্কার হচ্ছে; বিচার সম্পর্কিত, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এটর্নি জেনারেল অফিস একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এটা আমার নিজস্ব চিন্তা। সে রকমই। আমি মনে করি, অধ্যাপক ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মান হানি করা হচ্ছে এবং এটা বিচারিক হয়রানি। তিনি বলেন, উনি বাংলাদেশের জন্যই যে শুধু সম্মান বয়ে এনেছেন তা কিন্তু নয়, উনি সারা পৃথিবীর জন্য সম্পদ। আপনার এই অবস্থান সাংঘর্ষিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে এটা সাংঘর্ষিক মনে হয় না। আমরা মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী। ধরতে পারেন এটা আমার মুক্ত চিন্তা।
এমন অবস্থান নেয়ায় আপনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আশঙ্কা করছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, অনেক কিছুই হতে পারে। অস্বাভাবিক কিছু না। খোলাচিঠির প্রতিবাদের বিষয়ে এটর্নি জেনারেল অফিসের অনেকেই বলছেন এটি এটর্নি জেনারেল অফিসের কোনো নির্দেশনা নয়, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন? জবাবে তিনি বলেন, এটর্নি জেনারেল অফিস থেকে তো এই নির্দেশনাই এসেছে। আপনি আপনার অবস্থানে এখনো অনড় আছেন কিনা- জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি আমার অবস্থানে অনড় আছি। ড. ইউনূস যে শুধু বাংলাদেশের সুনাম বয়ে এনেছেন তা নয়, তিনি সারা বিশ্বের সম্পদ।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের একাধিক আইন কর্মকর্তা বলেন, খোলাচিঠির প্রতিবাদে বিবৃতির জন্য গত রোববার থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন সাধারণ আইনজীবীরা। যার একটি কপি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে সই করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
এর আগে সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি পাঠিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেল বিজয়ী ছিলেন। চিঠিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, আল-গোর, তাওয়াক্কুল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসসহ ১৪ জন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। ওরহান পামুক, জেএম কোয়েটজিসহ ৪ জন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। জোসেফ স্টিগলিৎজসহ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী আছেন ৭ জন। এ ছাড়া রসায়নে ২৮ জন নোবেল বিজয়ী, চিকিৎসাশাস্ত্রে ২৯ জন নোবেল বিজয়ী এবং পদার্থবিজ্ঞানে ২২ জন নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন চিঠিদাতাদের তালিকায়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সামরিক কমান্ডারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য শেখ হাসিনাকে খোলাচিঠি দেন ১৭৫ জন বৈশ্বিক নেতা।
আরো পড়ুন : দেশের অর্থনীতির সূচক অব্যাহত নিম্নমুখী থাকলে ব্যবসা বাণিজ্য সংকটে পড়বে