কাওছার আহমদ, সিলেট: বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এর আগে তিনি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গতকাল শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
মেয়র আরিফের এই পদোন্নতিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ‘শান্ত¡না পুরস্কার’ হিসেবে দেখছেন অনেকে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনেকরেন, দলের সিদ্ধান্ত মানায় হাইকমান্ড তাঁকে পুরস্কৃত করেছে। সিলেট জেলা বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক শরীফুল হক বলেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে গত সিটি নির্বাচনে মেয়র আরিফ ‘হ্যাটট্রিক মিশন’ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। নগরবাসীর অকুন্ঠ সমর্থন থাকা সত্তে¡ও দলের সিদ্ধান্তকে বুক পেতে নিয়ে যে ত্যাগ করেছেন তার প্রতিদান হিসেবে দল তাকে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বানিয়েছে। এটা আরিফুল হক চৌধুরীর ন্যায্য পাওনা ছিল।
দলীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২১ জুন অনুষ্ঠিত হয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মধ্যে আরিফকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ওঠে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে আরিফকে নির্বাচনে আনার প্রক্রিয়া হয়ছিল বলে তখন নানা মহলে আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে আরিফ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তার মডেলে আবার মেয়র হচ্ছেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনেও প্রচার পায়।
এ অবস্থায় আরিফ ২০ মে বিকালে সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারী মাঠে নাগরিক সভা ডাকেন। জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নাগরিক সভায় নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বলে আখ্যায়িত করে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াঁনোর ঘোষণা দেন। এসময় বিএনপির নেতাকর্মী ও নগরবাসীকে ভোটের দিন কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বানও জানান আরিফ।
প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণার পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে আরিফ বলেন, ‘মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যেকোনো প্রয়োজনে, সব ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সব সময়ই থাকব।’
নাগরিক সভায় বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘বিএনপি আমার অস্থিমজ্জায়। ছাত্রজীবনে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। আজীবন বিএনপিই হবে আমার শেষ ঠিকানা।’
সূত্র আর জানায়, গত এপ্রিলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যুক্তরাজ্য যান তিনি। সেখানে তারেকের সিগন্যাল পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তা ‘লাল না সবুজ’ তা স্পষ্ট করেননি। এছাড়া ঢাকায় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠক করেন আরিফ। তখন নির্বাচন বর্জনের পুরস্কার হিসেবে আরিফ বিএনপিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন ওঠে। দলীয় নির্দেশ মানায় আরিফকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বা যুগ্ম মহাসচিবের মতো পদ দেওয়া হতে পারে বলে শোনা গিয়েছিলো।
তবে প্রার্থী হওয়া-না হওয়ার ক্ষেত্রে এসব চাওয়া-পাওয়ার কোনো সংযোগ নেই বলে দাবি করেন মেয়র আরিফ। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির রাজনীতি করি। সবার সহযোগিতা নিয়ে মাতৃতুল্য পরম শ্রদ্ধাভাজন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে চাই।
উল্লেখ্য, শনিবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এ মালিককে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সুইডেন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আবেদিন মোহনকে সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাঈদ সোহরাবকে সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনকে সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাটকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করাা হয়েছে।
এছাড়া বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক লিটন মাহমুদকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
কাওছার আহমদ