নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে বসে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনাররা সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য বর্তমান কমিশনারদের নানা ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বিশ্বমানের জাতীয় নির্বাচন করতে দরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। বিদ্যমান ব্যবস্থায় ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। আবার কেউ বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর ডাকাত সরাতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে-এমন মন্তব্যও করেছেন কোনো কোনো নির্বাচন কমিশনার। গতকাল রবিবার ইসির সঙ্গে নির্বাচন ভবনে সংলাপে বসে এসব দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তারা।
সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য না থাকলে আমাদের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কষ্টকর হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একার পক্ষে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’
সাবেক কমিশনারদের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে বর্তমান সিইসি বলেন, ‘অতিথিরা বলেছেন, বর্তমান সিস্টেম যে আছে, এখানে খুব বেশি ভালো করা সম্ভব নয়। আমরা যদি দৃঢ় থাকি, আইন দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি, তাহলে অনেকটা উন্নয়ন সম্ভব।’
গতকাল বেলা ১১টায় শুরু হওয়া সংলাপ শেষ হয় দুপুরে। এর আগে শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল কমিশন। শিগ্গিরই ইসির প্রধান স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি সংলাপে বসবে বলেও জানান সিইসি। ২৮ জন সাবেক নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টকে এই সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত হয়েছিলেন ১০ জন। সংলাপে সাবেক সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফ, ড. এ টি এম শামসুল হুদা, কে এম নুরুল হুদা, সাবেক ইসি শাহ নেওয়াজ, আবু হাফিজ ও মাহবুব তালুকদার, সাবেক ইসি সচিব ড. সাদিক ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব জেনমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমানসহ বর্তমান ইসিরা এবং ইসি কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনকে রাজনীতিবিদদের শিক্ষক হতে বললেন সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, মানুষকে যদি বিশ্বাস করতে পারেন তাহলে সুন্দর জিনিস বেরিয়ে আসবে। আর যদি বিশ্বাস করতে না পারেন, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন না।
ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে নির্বাচন কমিশনকে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে সব দল না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
সদ্য বিদায়ি সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, সবার প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন। এজন্য সব দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। নির্বাচনের সময় মাঠে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করেন তিনি।
ভোটকেন্দ্রের ডাকাত সরাতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। তিনি বলেন, ব্যালট পেপারেও তো সিল মারা যায়। এজন্য ইভিএমকে দোষারোপ করে লাভ নেই।
সিইসির অসহায়ত্ব প্রকাশ : কুমিল্লা সিটি নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়তে বললেও ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা তাতে কান না দেওয়ায় দৃশ্যত অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। আইনবিধির কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংসদ সদস্যের জন্য ইসির অনুরোধই ‘যথেষ্ট’। এর পরও না মানলে এবং মামলার ফলাফল না পেলে করার কিছু থাকে না সাংবিধানিক সংস্থাটির।
আরো পড়ুন: এসিআরে সর্বোচ্চ নম্বর পেলেন অপরাধে জড়িত কর্মকর্তারা !