ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ ভোলাহাটের মহানন্দা নদীর ডান তীর ভাঙনরোধে বাঁধ নিমার্ণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিমার্ণের ২ মাসের মধ্যে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ-নদীর ডান তীর রক্ষার জন্য প্রায় কোটি টাকা খরচ করে গোপিনাথপুর এলাকায় ১৫০ মিটার ভাঙ্গনরোধে বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কাজটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন এন্ড কোং।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়েও স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। চরধরমপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃমজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,নদীর তীরে আমার বেশ কিছু জমি রয়েছে। নদীর তীর বাঁধার সময় থেকেই প্রতিদিনই জমিতে আসা হত। ঠিকাদারেরা বাইরে থেকে বালি না এনে যেখানে বাঁধ দেয়া হচ্ছে ঠিক তার তল থেকেই মাটি তুলে কিছু বস্তায় ভরে নাম মাত্র কাজ করেছে। বাঁধের গোড়ায় কোন বস্তা না দিয়ে তাড়াহুড়ো করে কাজ সেরেছে আবার উপরও আপনারা দেখেন যে বস্তা নেই এবং অল্প বৃষ্টিতেই বøক ভেঙ্গে নদীতে চলে গেছে। ফলে সরকারের ভাল উদ্দেশ্য নষ্ট হচ্ছে। মধ্যখান থেকে লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার আর কর্মকতারা। মোঃ এস্তাব আলী নামে অপর বাসিন্দা জানান,বাঁধের জন্য যে বøক তৈরি করা হয়েছে সেগুলো দায়সারা। কারন,বøকে ব্যবহার করা হয়নি পর্যাপ্ত সিমেন্ট ও উন্নতমানের বালি। যার কারনে এখনি বøকের বালি ও সিমেন্ট ঝরে পড়ে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে।
বøক বাঁধায় করতে দুই-তিন নাম্বার ইট ব্যবহার করা হয়েছে তিনি দাবি করেন যে ডিজাইন অনুযায়ী কাজ ও পর্যপ্ত কাঁচামাল না ব্যবহার করে দায়সারা কাজ করেছেন ঠিকাদার আর এমন দূর্নীতি করতে সহযোগিতা করেছে প্রকল্পের দায়িত্ব থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই কর্মকতা সহকারী প্রকৌশলি মোঃ মাহাবুব আলম ও এসও মোঃ আব্দুর রহমান । তাঁর দাবি সরকারের বরাদ্দ প্রায় কোটি টাকার মধ্যে অর্ধেক টাকাও খরচ করা হয়নি। অধিকাংশ টাকা লুটপাট করা হয়েছে।
স্থানীয় মাছ চাষী সাদিকুল ইসলাম,হাসান আলী ও মঈনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন,নদীর ধারে যে বøক ফেলা হয়েছে তা অল্প বৃষ্টিতে ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া ড্রেজারমেশিন দিয়ে উপর থেকে মাটি নিচে নামিয়ে সেখানে কোন বস্তা দেওয়া হয়নি শুধু উপর কিছু বস্তা দিয়েছে যেন কেউ প্রমাণ না করতে পারে তাদের অনিয়ম ও দূর্নীতি। যার কারণে নদীর ধার যে কোন মুহুর্তে বসে যাবে। কিছু অংশ দু’মাস যেতে না যেতেই ভেঙ্গে গেছে। ৯০ লাখ টাকা খরচ করে যে কারনে বাঁধ দেয়া হল তা এক বর্ষা মৌসুমে টিকবে কিনা-সন্দেহ তাঁদের। সেলিম রেজা নামে এক যুবক অভিযোগ করে বলেন,কাজের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মামলা ও হামলার ভয় দেখায় ঠিকাদার আকবর খান সোহেল ও তার লোক জন। এমনকি যাঁদের জমি লীজ নিয়ে বøক তৈরি করা হয়েছিল তাঁদের টাকা পরিশোধ না করেই ঠিকাদার লাপাত্তা রয়েছে।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসাঃ শাহানাজ খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের পাশে থেকে উন্নয়নের কাজ তদারকি করার দায়িত্ব থেকে খোঁজ-খবর নিতে যায়। সেই সুবাদে কাজ চলার সময় সরজমিন গেলে কাজের ব্যাপক অনিয়ম দেখে প্রতিবাদ করেছিলাম। এ সময় ঠিকাদার ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান। ম্যানেজ চেষ্টা ব্যার্থ হলে আমার নামে আদালতে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে হয়রানিতে ফেলেছেন। উচ্চ আদালত থেকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় জামিনে মুক্ত হই।
এদিকে বক্তব্য জানতে ঠিকাদার আকবর খান সোহেলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,বøক তৈরির কাজ করেছিল ঢাকার ডলি কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁরা ছেড়ে চলে যাবার পরে আমরা সিডিউল অনুসারেই কাজ করেছি। অল্প বৃষ্টিতেই বাঁধের ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাশের জমির মালিক বাঁধ দিয়ে দেওয়ায় বাঁধের ভাঙ্গণ সৃষ্টি হয়েছে। মেরামতের কাজ চলছে শেষ হয়ে যাবে দ্রুত।
ঠিকাদারের কাজের স্বচ্ছতা দাবী করলেও খোদ সাইডের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসও) মোঃ আব্দুর রহমান সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজের কিছু অনিয়মের কথা বলতে শুনা গেলেও এখন তিনি অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন।
সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মুখলেসুর রহমান বলেন,নদীর তীর ভাঙ্গনরোধে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম নেই। তবে বৃষ্টির পানিতে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে এর মেরামত চলছে। ২/১দিনের মধ্যে মেরামতের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, আরো ভাঙ্গন দেখা দিলে ১ বছরের মধ্যে ঠিকাদারকে নিজ দায়িত্বে ঠিক করে দিতে হবে।
গোলাম কবির- ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
আরো পড়ুন : নওগাঁয় মাদক মামলায় দুই যুবকের যাবজ্জীবন