কিছুতেই নামটি মনে করে উঠতে পারছিলেন না হেনরি ওলোঙ্গা। তবে যাঁর কথা মনে এলেও মুখে আসছিল না, তাঁর বোলিং অ্যাকশন ঠিকই মনে আছে এখনো। সেটি দেখিয়েই জিম্বাবুয়ের সাবেক পেসার জানার চেষ্টা করলেন বাংলাদেশের এক খেলোয়াড়ের বর্তমান অবস্থা।
‘বাংলাদেশের যে অধিনায়ক ছিল পেস বোলারটি, কী যেন নাম ওর?’
—মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা বলছেন?
‘ইয়েস! মাশরাফি।
বিজ্ঞাপন
ওর কি ক্যারিয়ার শেষ?’
—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই, তবে এখনো খেলছেন। তিনি আবার এখন এমপিও।
‘এমপি? সত্যিই? ওয়াও…। ’
মাশরাফির বিপক্ষে খেলেছেন সেই কবে! এত দিন পর বাংলাদেশি পেসার জনপ্রতিনিধি হয়ে গেছেন শুনে ওলোঙ্গার উচ্ছ্বাসের সঙ্গে থাকল অপ্রিয় এক জিজ্ঞাসাও। একেই নিজের দেশের রাজনীতিকদের একদমই বিশ্বাস করেন না অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইডে থিতু হওয়া এই জিম্বাবুইয়ান, তার ওপর ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতি নিয়েও তাঁর ধারণা এর কাছাকাছিই। ধারণা থেকে এ রকম একটি উপসংহারেও পৌঁছে যান যে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মানেই…।
মাশরাফিকে নিয়েও তাই নেতিবাচক কৌতূহলই পেয়ে বসে ১৯ বছর ধরে নিজের দেশে যেতে না পারা ফাস্ট বোলারকে। এখন শুধুই গান গাওয়া ও ‘পাবলিক স্পিকিং’-এর সীমানার মধ্যে নিজের জীবনকে আবদ্ধ করে ফেলা সাবেক ক্রিকেটার তত্ক্ষণাত্ জিজ্ঞেস করে বসেন, ‘মাশরাফি কি ভালো এমপি? সে-ও আবার দুর্নীতিগ্রস্ত নয় তো?’ এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো খবর নেই বলে আশ্বস্ত করার পর মাশরাফিকে নিয়ে কথা বাড়াতেও আর খুব একটা আগ্রহী হলেন না ওলোঙ্গা।
ঢুকে পড়লেন অন্য প্রসঙ্গে। যেখানে কথায় কথায় ক্রিকেটের দুর্নীতির প্রসঙ্গও উঠে আসে হিথ স্ট্রিক ও ব্রেন্ডন টেলরের সুবাদে। জুয়াড়িদের ফাঁদে পা দিয়ে জিম্বাবুয়ের এই দুই সাবেক অধিনায়কই এখন নিষিদ্ধ। এঁদের মধ্যে প্রথমজনের ক্রিকেট জুয়ার অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার খবর শুনে খুব সম্ভবত বিস্মিতও হননি ওলোঙ্গা, ‘আমি শুধু বলতে পারি, ব্রেন্ডনের নাম দেখে অবাক হয়েছিলাম। আরেকজনের কথা বলতে পারি না। বুঝতে পারছেন তো?’
একসময় একে অন্যের কাছাকাছি ছিলেন বলেই হয়তো স্ট্রিকের অন্য প্রবণতাও চোখে পড়েছিল ওলোঙ্গার, ‘স্ট্রিকি আমার অনেক উপকার করেছে ক্যারিয়ারের শুরুতে। ওদের ফার্মে আমি থেকেছিও। আমাকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে যেত। ওকে নিয়ে তাই বাজে কথা খুব একটা বলতে চাই না। তবে আমি অবাক হইনি ওর নাম দেখে, এটি বলতে পারি। হতে পারে ভুল, হতে পারে অন্য কিছুও। ’ যদিও নিজের দেশে সয়-সম্পত্তির কোনো অভাব ছিল না স্ট্রিকের। তার পরও সাবেক এই ফাস্ট বোলারকে কেন অন্যভাবে বিস্তর রোজগারের নেশা পেয়ে বসল, একসময়ের ঘনিষ্ঠ সতীর্থেরই সেই গবেষণা সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারার কথা। তা করতে গিয়েও ওলোঙ্গা টেনে আনলেন রাজনীতিবিদদের।
অ্যাডিলেইড শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের সমুদ্রসৈকত নোয়ালুঙ্গার এক সি ফুড রেস্তোরাঁয় বসে জিম্বাবুয়ের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘অবশ্যই ওর (স্ট্রিক) অনেক ছিল। (তার পরও কেন চেয়েছে) আমি জানি না। সত্যিই জানি না। রাজনীতিবিদরা কেন এত চায়? এক মিলিয়নে কেন তারা সন্তুষ্ট থাকে না? তিন মিলিয়ন কেন চায়? লোভের কারণেই তো। আরো বেশি পেতে চায়। স্ট্রিকির বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। শুধু জানি, আমি অবাক হইনি। এই বুকি সম্ভবত কোনো একাডেমি বা লিগ চালুর কথা বলেছিল। তবে একটি সময়ে গিয়ে তো উদ্দেশ্য ঠিকই বোঝা যায়। তখনই রিপোর্ট করা উচিত ছিল। সেটি করলে হয়তো ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতো, আট বছরের জন্য নয়। ’
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের বর্তমান বাস্তবতায় টেলরের মতো কারো পক্ষে লোভ সামলানো মুশকিল বলেও মনে হয় ওলোঙ্গার, ‘‘যথেষ্ট পরিমাণে পারিশ্রমিক যদি কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে বুকির প্রস্তাব উপেক্ষা করা যায়। কিন্তু যদি পরিশ্রমের মূল্য খুব বেশি না পাওয়া যায়, তাহলে বুকি এসে যখন বলে, ‘হেই ব্রেন্ডন, চলো কিছু পান করি…’; এভাবেই হয়ে যায়। ব্রেন্ডনকে তো ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছিল, তাই না? সে নিজে অন্তত সেরকমই বলেছে। সত্যিটা জানি না। ’’
অবশ্য এর কোনো অজুহাত থাকতে পারে বলেও মনে করেন না ওলোঙ্গা, ‘তবে কোনো কিছুই আসলে অজুহাত হতে পারে না। হিথ স্ট্রিক ও ব্রেন্ডন টেলর, দুজনই জানে যে প্রস্তাব পাওয়া মাত্র রিপোর্ট করতে হবে। এমনকি আমি যখন খেলতাম, তখনো তো এসব জানতাম। কাজেই যথেষ্ট পারিশ্রমিক পাচ্ছেন কি পাচ্ছেন না, এটি বিবেচনায় থাকার কোনো কারণ নেই। নিজের বিবেকই আপনাকে বলবে যে কাজটি ঠিক নয়। আমি যদিও খুব নিষ্ঠুরভাবে ওদের বিচার করতে চাই না। কারণ সবাই মানুষ। সবারই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি আছে। ’
মানুষ রাজনীতিবিদরাও। তবে তাঁদের নিয়ে ওলোঙ্গার মনোভাব এমন বিরূপ যে মাশরাফি এমপি হয়ে গেছেন শুনে দুর্নীতির গন্ধ পেতে শুরু করলেন!
সুত্র-কালের কন্ঠ
আরো পড়ুন : দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা গেলেও ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না