ইরানের মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জেরে যে কোনো মুহূর্তে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালানোয় সম্মতি দিয়েছেন। এরপর থেকে উভয় দেশই যুদ্ধের জন্য সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, যুদ্ধ শুরু হলে তারা ইসরায়েলকে সহায়তা করবে। সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইরানের হামলা ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। এসঙ্গে তারা পাল্টা হামলারও পদক্ষেপ নিচ্ছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানে হামলা না চালাতে ইরানের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হামলা হলে মিত্র তেল আবিবকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে পেন্টাগন। আরেক খবরে বলা হয়, ইসরায়েলে হামলার জন্য এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে ইরান। শুরুতেই ইরান ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইরান একযোগে বিভিন্ন স্থান থেকে হামলা শুরু করতে পারে। এই স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইয়েমেন, সিরিয়া এবং ইরাকসহ ইরান-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মিত্র বাহিনীর অবস্থান। অন্যদিকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে তেল আবিব গতকাল বলেছে, ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েল প্রস্তুত। এর জন্য এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর মুখপাত্র অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, আমরা পাল্টা হামলার জন্যও প্রস্তুত রয়েছি। এর জন্য গেল ২৪ ঘণ্টায় আমরা দফায় দফায় বৈঠক করেছি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, আমরা খুব গভীরভাবে এবং সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য কী কী করণীয়- সে বিষয়গুলো নিয়েও আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে ভূমধ্যসাগরে এরই মধ্যে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তেহরান থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইরানের মাটিতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরানকে সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। হানিয়ার নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বুধবার সকালে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে এই আদেশ দেন খামেনি। খামেনির নির্দেশনাটি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বিপ্লবী গার্ডের দুজন সদস্য। হানিয়া নিহত হওয়ার পরপরই এক এক্স বার্তায় প্রতিশোধের বার্তা দিয়েছিলেন খামেনি। তিনি লিখেছিলেন, ‘ইরানের ভূখন্ডে ঘটা এমন দুঃখজনক ঘটনার পর প্রতিশোধ নেওয়াটা আমাদের কর্তব্য। ইসরায়েল কঠোর শাস্তি পাওয়ার মঞ্চ তৈরি করেছে।’ খবরে বলা হয়, খামেনির কথাই ইরানে শেষ কথা। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কও ছিলেন।
যুদ্ধ প্রসারিত হলে বা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালালে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা উভয়ের জন্যই পরিকল্পনা তৈরি করতে বিপ্লবী গার্ড এবং সেনাবাহিনীর সামরিক কমান্ডারদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গার্ডস এবং জাতিসংঘে ইরানের মিশনসহ অন্যান্য ইরানি কর্মকর্তারাও প্রকাশ্যে বলেছেন, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে তেহরানের।
আরো পড়ুন : সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ হল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি