কাওছার আহমদ, সিলেট: দলের সিদ্ধান্ত না মেনে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে ভোটের মাঠ গরম রাখছেন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা। মেয়র পদে কোন প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে অন্তত দু’ডজন নেতা এ দু’দলের রয়েছেন। এ তালিকায় বর্তমান ও সাবেক ১০জন কাউন্সিলরও রয়েছেন। এসব প্রার্থীরা দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এদের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও প্রচারণা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এতে নির্বাচনের শুরুতেই ভোটের মাঠ গরম হয়ে ওঠেছে।
বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ নিবেনা বলে ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি ও জামায়াত ইসলাম। আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ না নিতে দলের নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা পাঠায় এ দু’দল। কিন্ত স্থানীয় পর্যায়ের অনেকেই তা আমলে নেয়নি।
বিএনপি,
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কোন নেতাকর্মী অংশ না নেওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডও হার্ডলাইনে ছিল। কিন্তু কোন কিছুই থামাতে পারেনি দলের নেতাকর্মীদের। তারা সবকিছু উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছে পুরোদমে। অবশ্য বেশ কিছু‚ নেতাকর্মী নির্বাচন বয়কট করে গণমাধ্যমে প্রেসব্রিফিং করেছেন। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ অনেকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছেন। তবে সিটি নির্বাচন নিয়ে সিলেট বিএনপির ভোট গ্রহণ ও বর্জনের খেলা চলছে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে।
দলীয় সূত্র জানায়, এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে অংশ করবেনা বিএনপি। এমন নীতিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা এলাকাগুলোয় তারা অংশগ্রহণ করেন। মূলত: বিএনপির এমন নীতির কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলটির নীতিনির্ধারকদের তেমন একটা বিশ্বাস করতে পারছেননা। আর তাই সিলেট সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে কঠোর নির্দেশনাকে পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করছেন না অনেকে।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত বর্তমান ৭ কাউন্সিলরের মধ্যে ৬ জনই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছেন। এই ৬ বর্তমান কাউন্সিলর হলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা বেগম শাহনাজ। এরা ছাড়াও বিএনপি এবং ছাত্রদলের আরও কয়েকজন নেতা বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সিলেট জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সভপতি আলতাফ হোসেন সুমন ও এমসি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বদরুল আজাদ রানা দু’জনেই নির্বাচন করছেন। এ দুই ছাত্রনেতা তাদের কর্মী সমর্থক নিয়ে বেশ সক্রিয় রয়েছেন।
এদিকে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনি ১৮ মে নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।
এর দু’দিন পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর রেজিস্টারী মাঠে নাগরিক সভা ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
বিএনপির এ দু’নেতা ভোট বর্জনের পর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং মহানগরের সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রচার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন বর্জন করে আমরা সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছি। নেতারা এটা বুঝতেই পারছেন না। অংশগ্রহণ করলে কারচুপি হলেও জনগনের কাছে সেটা তুলে ধরা যাবে। আমরা মাঠের কর্মী হিসেবে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
অবশ্য সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেছেন, দলের খাঁটি কোন কর্মী হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেনা। যারা দলের আদর্শকে বুকে লালন করবে তারা অবশ্যই দলের এ সিদ্ধান্ত মানবে। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব বলেন, প্রহসনের এ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। যারা সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আতাঁত করে নির্বাচনে যাবে তাদের স্থান বিএনপিতে নেই।
জামায়াত ইসলাম
বর্তমান সরকারে অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেনা বলে ঘোষণা দিয়ে আসছে নিবন্ধন হারানো জামায়াত ইসলাম। কিন্তু দলের এই সিদ্ধান্তকে তেমন আমলে নেয়নি সিলেটের নেতাকর্মীরা। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে ঠিকই প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণাও চালাচ্ছেন। মানছেন না বয়কটের সিদ্ধান্ত।
জামায়াত সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে জামায়াতের অন্তত ৮ জন নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জন বর্তমান ও দু’জন সাবেক কাউন্সিলর রয়েছেন। নগরীর ১৬ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল মুহিত জাবেদ, ২৪ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সুহেল আহমদ রিপন, ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাজিক মিয়া ও ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল জলিল নজরুল এবারও প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া জামায়াত নেতাদের মধ্যে ১০ নং ওয়ার্ডে আব্দুল হাকিম, ২৮ নং ওয়ার্ডে সুহেল রানা, ৩৩ নং ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল ইসলাম ও ৪১ নং ওয়ার্ডে মঞ্জুরুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন।
গত সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত ইসলাম নিজেদের প্রার্থী দিয়েছিল। তৎকালীন সিলেট মহানগরীরর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দলীয় প্রার্থী ছিলেন। তখন জামায়াতকে মেয়র পদে প্রার্থী না দেওয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল কিন্তু জামায়াত সে অনুরোধ রাখেনি। বরং বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁেড় তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে ৯২ হাজার ৫’শ ৮৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। আর জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে ১০ হাজার ৯’শ ৫৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান। এ নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরী হয়েছিল তা এখনও মিটেনি বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়।
দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে কথা হয় জামায়াতের সিলেট মহানগর শাখার আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আমরা এই সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই গত সিটি নির্বাচনে আমরা আলাদা প্রার্থী দিলেও এবার দেইনি। এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। দলীয় পরিচয়ে কেউ কাউন্সিলর প্রার্থী হন না। স্থানীয় বিষয় এতে জড়িত থাকে। এর সাথে দলের কোন সম্পৃক্ততা থাকেনা।
কাওছার আহমদ
আরো পড়ুন : কৃষ্ণচূড়ার সময় এখন