২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে কমেছে মৃত্যু, খুন ও ধর্ষণ

ওকে নিউজ স্পেশাল প্রচ্ছদ মুক্তমত হ্যালোআড্ডা

দেশে খুন ও ধর্ষণ কমেছে। কমেছে রাজনৈতিক সংঘাতে মৃত্যুর সংখ্যাও। ২০২১ সালে যেখানে রাজনৈতিক সংঘাতের ৯৩২টি ঘটনায় মারা যান ১৫৭ জন। সেখানে গেল বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ৪৭৯টি ঘটনায় মারা গেছেন ৭০ জন। একইভাবে ২০২১ সালে ১ হাজার ৩২১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গেল বছর সেখানে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৩৬ জন। তবে ধর্ষণের পর হত্যার সংখ্যা একই আছে। আগের বছর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল ৪৭ জনকে। গত বছরও এই সংখ্যাটা একই। তবে ২০২০ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৫৩ জনকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) থেকে গত চার বছরের তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। 

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে মৃত্যু হয় ৭০ জনের। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৯১৪ জন। ২০২১ সালে ১৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৩৩ জন। ২০২০ সালে করোনার মধ্যে ১৫৭ ঘটনায় মৃত্যু হয় ৩১ জনের। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৮৫৯ জন। ২০১৯ সালে করোনার মধ্যে ২০৯টি ঘটনায় মারা গেছেন ৩৯ জন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৬৮৯ জন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে কমেছে ধর্ষণও। এ বছর ৯৩৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৫৮ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ২০২১ সালে ১ হাজার ৩২১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৯৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৬২৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর মারা গেছে ৫৩ জন। ৩২৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৪১৩ জন নারী। ধর্ষণের পর মারা গেছেন ৭৬ জন। ২২৪ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। গত চার বছরের তথ্য বলছে, ধর্ষণ ও মৃত্যু কমেছে।

অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারও কমছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার কমছে। ২০২২ সালের আগস্টে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে চারটি। জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল সাতটি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অস্ত্র উদ্ধার হয় চারটি, মে মাসে যেখানে উদ্ধার হয়েছিল ১৬টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল পাঁচটি, মার্চে সেখানে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১৩টি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১৭টি, মার্চেও এই সংখ্যা ছিল ১৭টি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে গেলে উদ্ধারও হয় বেশি। বর্তমানে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার অনেক কমেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, খুন কমেছে। তবে সাইবার অপরাধ বেড়েছে। সাইবার অপরাধ বাড়ার কারণে মোট সংখ্যায় অপরাধের সংখ্যাও বেড়েছে। ২০২০ সালে সেখানে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে ২৫ হাজার ৭১১টি। ২০২১ সালে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৮ হাজার ৭৮৮টি। ২০২২ সালেও এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৯ হাজার ৫২২টি। এর মধ্যে সাইবার অপরাধই বেশি।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৪৫৮টি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যা ছিল ৩ হাজার ৪৮৫টি। অর্থাৎ খুব সামান্য কমেছে। এদিকে সর্বশেষ ২০২১-২০২২ অর্থবছরে খুনের ঘটনা আরও কমেছে। এই অর্থবছরে খুন হয়েছেন ৩ হাজার ৪১৬ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খুনের সংখ্যা আরও কমবে।

অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরাধের ধরন বদলেছে। যে কারণে সংখ্যায় কম মনে হচ্ছে। এখন সাইবার অপরাধ অনেক বেড়েছে। সরাসরি খুন বা ধর্ষণ কমলেও সামাজিক মাধ্যমে নারীরা অনেক বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফলে সংখ্যা দেখে খুশি না হয়ে, যেদিকে অপরাধ বাড়ছে সেগুলো কীভাবে ঠেকানো যায়—তার ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন : কিন্তু সফল হওয়া অসম্ভব নয় কারণ কাজটা কঠিন

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *