ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক বলেছেন, ‘আজকে আমরা রাজনীতিবিদদের লুটপাট-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছি। হাসিনার ফ্যাসিবাদের কথা বলছি। হাসিনার ফ্যাসিবাদী হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী এ দেশের আমলাতন্ত্র, এই প্রশাসন। এসপি বলেন, ডিসি বলেন, তাঁরা বহাল তবিয়তে আছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ দেশ ছাড়ছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে। কয়জন এসপি-ডিসি গ্রেপ্তার হয়েছে? কয়জন ইউএনও-ওসি গ্রেপ্তার হয়েছে? এই ওসি, ডিসি, ইউএনও, এসপিরা হাসিনার আকাম-কুকামের সহযোগী ছিল।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ভাদুঘর এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘জুলাই বিপ্লব ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জন-আকাঙ্ক্ষার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। নুরুল হক বলেন, ‘হাসিনার বিচারের পাশাপাশি প্রশাসনের মধ্যেও যাঁরা সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন, ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন, তাঁদের ন্যূনতম বিচারের মুখোমুখি অবশ্যই করতে হবে।’
নুরুল হক বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, মেয়ররা সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবেন। গত ৫০ বছরে দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, মাফিয়ারা রাজনীতিকে যেভাবে গ্রাস করেছে, আজকে ডাকসু-চাকসুসহ সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় যদি ছাত্র রাজনীতি এবং ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেওয়া হয় পরিচ্ছন্ন তরুণ নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে।
নুরুল হক আরও বলেন, ‘এই যে রাষ্ট্র সংস্থার, এগুলো জনগণ মানবে না, যদি আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি। বেকারত্ব মোচনে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করতে পারি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক করতে না পারি। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এ পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পারছে না। তারপরও আমরা বলছি, আমরা আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরতে চাই। এখনই যদি আমরা বলি, ভোটাধিকারের জন্য আবার ৫ আগস্ট ঘটাতে হবে। না এটা হতে দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ সবাই বলছে, এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তাহলে কেন আমরা এ সরকারের বিরুদ্ধে এখনই ভোটের জন্য, নির্বাচনের জন্য আবার আন্দোলন করতে হবে।’
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা কি সারা জীবন আন্দোলন করব? আমরা কি রাজপথে শুধু রক্ত দেব? আমরা কি জীবন দেব? এই আন্দোলন-সংগ্রামে দুই হাজার লোক মারা গেছে? কয়জন এমপির ছেলে মারা গেছে? কয়জন মন্ত্রীর ছেলে মারা গেছে? কয়জন নেতার ছেলেমেয়ে, বউ-বাচ্চা মারা গেছে? কোনো নেতার বউ-বাচ্চা, ছেলেমেয়ে মারা যায়নি। মারা গেছে আপনার মতো, আমার মতো কৃষকের সন্তান। শ্রমিকের সন্তান, রিকশাওয়ালা, গার্মেন্টস কর্মী, ছাত্র-জনতা নেহায়েত সাধারণ মানুষ। ১৯৭১ সালেও তাই হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান, বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি সোহেল রানা, জেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মাসুম আহমেদ, জেলা শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি শিব্বির আহমেদসহ জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন : নির্বাচন আগে, জনগণের নির্বাচিত সংসদে আলোচনায় সংস্কার