টেনেটুনে অষ্টম শ্রেণি পাস করা লিটন ‘টাকশাল’ খুলে বসেন লালবাগে!

অনুসন্ধানী দুর্নীতি পুরুষ প্রচ্ছদ

তাইজুল ইসলাম লিটন। টেনেটুনে অষ্টম শ্রেণি পাস করেছিলেন। এর পর পাড়ার দোকান থেকে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নেন। সেটি সম্বল করে এক পর্যায়ে চাকরি নেন রাজধানীর নীলক্ষেতে এক কম্পিউটারের দোকানে। সেখানেই রপ্ত করেন জাল সনদ তৈরির পাঠ। এ লিটন এখন জাল সনদ তৈরি বাদ দিয়ে তৈরি করছেন জাল মুদ্রা। এ জন্য পুরান ঢাকার লালবাগের একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে রীতিমতো খুলে বসেছিলেন ‘টাকশাল’।

রোজা আর ঈদসহ নানা উৎসবে টাকার লেনদেন বেড়ে যায়। সে সুযোগে লিটনও দলবল নিয়ে তার টাকশালে জাল মুদ্রা তৈরি করছিলেন দিনে-রাতে। টার্গেট ছিল ঈদে দেশে ছড়িয়ে দেবেন কয়েক কোটি টাকার জাল নোট। কিন্তু পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখল না। শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা জালে ধরা পড়তে হয়েছে তাকে।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) লালবাগে জাল মুদ্রা তৈরির কারখানায় হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করে লিটনকে। ধরা পড়েছে তার তিন সহযোগীও।

আরো পড়ুন : ছাত্রদলের ক্যাডারদের হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেত্রীর বিভিশিকাময় আজ সেই দিন

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমানের নেতৃত্বে মঙ্গলবার সকালে এ অভিযান চালানো হয়।

কথিত সেই টাকশাল থেকে ২০ লাখ টাকা মূল্যের জাল নোট ও ভারতীয় দেড় লাখ জাল রুপি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সেখানে মেলে জাল মুদ্রা তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন ধরনের কালি, স্ক্রিন ফ্রেম, বিশেষ ধরনের কাগজ, রাসায়নিক, স্ক্যানার মেশিন, কাটার ও স্কেল। এ সব সরঞ্জাম দিয়ে লাখ লাখ জাল নোট তৈরি সম্ভব বলে বলছেন কর্মকর্তারা।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, লালবাগের নবাবগঞ্জের ছয়তলা নির্মাণাধীন একটি বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাটে জাল টাকার কারখানা চালু করেছিল লিটন। সে জাল সনদ, বিভিন্ন দলিল নকল করা ছাড়াও জাল মুদ্রা তৈরিতে পটু।

‘করোনা মহামারির পর অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নিয়ে লিটন জাল মুদ্রা তৈরিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার টার্গেট ছিল রমজান মাস, পহেলা বৈশাখ ও ঈদ সামনে রেখে জাল মুদ্রা ছড়িয়ে দিতে’-বলছিলেন ডিবি কর্মকর্তা মশিউর।

তা ছাড়া ভারতীয় জাল রুপি তৈরি করে তা সীমান্তে বিক্রির জন্যও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিল এই চক্র।

আরো পড়ুন : প্রধান শিক্ষককে মেরে ফেলার হুমকি দিল যুবলীগ নেতা

তিনি আরও বলেন, প্রতি এক লাখ টাকা মূল্যের জাল নোট এরা ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় ডিলারদের কাছে বিক্রি করে। এই ডিলাররা আবার তা তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাভে খুচরা বিক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়। গ্রেপ্তার আলী হায়দার তার অন্যতম সহযোগী। জাহাঙ্গীর ও মহসিন মূলত ডিলার। এ জাহাঙ্গীর নওগাঁ, নাটোর, বগুড়াসহ দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলের বিক্রি করে।

ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, খুচরা বিক্রেতারা ডিলারের কাছ থেকে এই জাল নোট কিনে শহরের ব্যস্ততম এলাকায় রেষ্টুরেন্ট, ভোজ্য সামগ্রী, প্রসাধনী ও বস্ত্রসহ বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের সময়ে আসল নোটের ভেতর জাল নোট ঢুকিয়ে দেয়।

আরো পড়ুন : রোজায় বেশি ক্লান্ত, মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও

যেভাবে চিহ্নিত লিটনের টাকশাল: ডিবি কর্মকর্তা মশিউর জানান, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল একটি চক্র পহেলা বৈশাখ ও ঈদ সামনে রেখে জাল মুদ্রা তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। এর পরই তারা নজরদারি বাড়াতে থাকেন। প্রযুক্তিগত তদন্ত ও ম্যানুয়ালি সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারেন জাল টাকা ও রুপির একটি চালান সংগ্রহ করার জন্য জাহাঙ্গীর নামের একজন নাটোর থেকে ঢাকায় আসছেন। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার সকালে তাকে অনুসরণ করে লালবাগের নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে সন্ধান মেলে জাল মুদ্রা তৈরির ওই কারখানার।

আরো পড়ুন : সরকারি রাস্তা দখল করে বাড়ী নির্মাণ করায় অবরুদ্ধ গোবিন্দগঞ্জে ৩ গ্রামের মানুষ

তিনি বলেন, এদের বিরুদ্ধে জাল মুদ্রা তৈরি ও ছড়ানোর ঘটনায় আগেও মামলা আছে। মঙ্গলবারের অভিযানের পর লালবাগ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তার লিটন জানিয়েছেন, গত ছয় মাস ধরে ফ্লাটটি ভাড়া নিয়ে তিনি সেখানে জাল মুদ্রা তৈরি করছিলেন।

আরো পড়ুন : বিএনপির ইফতারে আসেননি চীন–রাশিয়ার কূটনীতিকরা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *