দুর্নীতির দরজা খোলা রেখেই মিসর থেকে উড়োজাহাজ লিজ নিয়েছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। লিজের প্রক্রিয়া, মেরামতসহ নানা ক্ষেত্রে সরকারি টাকা ক্ষতি, অপচয় ও আত্মসাৎ করা হয়েছে কম-বেশি দেড় হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১ নম্বর সাব-কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সরকারি টাকা আত্মসাতের সুযোগ রেখে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর আগেও উড়োজাহাজ লিজসহ নানা কাণ্ড ঘটিয়েছে। এতে সরকারি টাকা অপচয় ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এবার মিসর থেকে দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বিরাট অঙ্কের টাকা অপচয় ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটল।
জানা গেছে, সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১ নম্বর সাব-কমিটি তদন্ত করেছে। তদন্তে বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকার ক্ষতি, অপচয় ও আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। সাব-কমিটি ওই অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনাটি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনটি দুদকে পাঠিয়েছে।
কমিশন সাব-কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে। ওই দুটি উড়োজাহাজ কেনা থেকে শুরু করে মেরামত, লিজের মেয়াদ শেষে ফেরত দেওয়া পর্যন্ত সব নথি চেয়ে দলের পক্ষ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ও সিইওর কাছে গত ২৮ মে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী ১২ জুনের মধ্যে ওইসব নথি দুদকে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।
জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এয়ারক্রাফট বহর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে উড়োজাহাজ দুটি লিজ নেওয়ার সময় মিসরে পরিদর্শনের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হয়েছিল। এই দলের সদস্যরা ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজ দুটিকে ভালো ও সচল উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছিল। তাঁদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিমান দুটি পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছিল। লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া, ইঞ্জিন নষ্ট হওয়া, বিকল ইঞ্জিন ফেরত দিয়ে অন্য ইঞ্জিন আনা, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ দিয়ে মেরামত করাসহ নানা ক্ষেত্রে সরকারের কম-বেশি দেড় হাজার কোটি টাকা অপচয় ও আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এদিকে বিমানের এমডি ও সিইওর কাছে দুদক যেসব নথি চেয়েছে, সেগুলো হলো- লিজ নেওয়ার উদ্দেশ্যে মিসরে পরিদর্শক দলের প্রতিবেদন, পরিদর্শক দল গঠন সংক্রান্ত অফিস আদেশ, উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নথি, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসহ পূর্ণাঙ্গ নথির সত্যায়িত কপি, লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র ও বিজ্ঞপ্তি কোন কোন পত্রিকায় ও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে- এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির প্রতিবেদন ও দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির তালিকা।
এ ছাড়া লিজ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ দুটি লিজ গ্রহণ ও ফেরত দেওয়া পর্যন্ত সব খরচের বিল-ভাউচার, রেজিস্টার, ব্যাংক হিসাব, ব্যাংক লেনদেনের রেকর্ডপত্রও চাওয়া হয়েছে।
লিজ নেওয়ার উদ্দেশ্যে গঠিত পরিদর্শক দলের সদস্যদের নাম, পদবি ও বর্তমান ঠিকানাসহ তালিকা, তাঁদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নথি, পাসপোর্টের প্রথম দুই পৃষ্ঠার ফটোকপি এবং মিসরে অবস্থান সংক্রান্ত সব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি, উড়োজাহাজ দু’টির বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য, এয়ারক্রাফট উড্ডয়নের সক্ষমতা, যোগ্যতা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি স্বীকৃত নিয়মাবলি বা নির্দেশিকার কপিও দুদক চেয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে উড়োজাহাজ দুটি লিজ নেওয়ার বছর না ঘুরতেই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে উড়োজাহাজটি সচল রাখতে মিসর এয়ার থেকে ভাড়ায় আনা হয় অন্য একটি ইঞ্জিন। পরে ওই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। তখন সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে।
আরো পড়ুন :জাপানের কারাগাড় থেকে মুক্ত হলেন রেড আর্মির মূল প্রতিষ্ঠাতা ফুসাকো শিগেনোবুর