শতকরা ৯৫ দশমিক ৮ ভাগ শিশু ঘরেই নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। এর মধ্যে বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় শিশুরা। শাস্তি ও নিয়মানুবর্তিতার কথা বলে শিশুদের উপর এই নিপীড়ন চালানো হয়। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ও ইনসিডিন বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া যায়।
জরিপে অংশগ্রহণকারী শতকরা ৯৫.৩ জন শিশু জানিয়েছে, তারা জীবনের কোনো না কোনো সময় ঘরে, বাইরে, স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৯৬.২ জন মেয়ে শিশু এবং শতকরা ৯৪.৫ জন ছেলে শিশু।
‘বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে মঙ্গলবার সিরডাপ মিলনায়তনে এমজেএফ’র সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শতকরা ৮৬.৯ জন শিশু গৃহে শারীরিকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাসায় থাকা শিশুরা জানিয়েছে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থার’ নামে তাদের উপর অত্যাচার করা হয়। অন্যদিকে প্রায় শতকরা ৮১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বলেছেন সন্তান যদি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, তাহলে তারা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিশুকে শারীরিক শাস্তি দেয়ার পক্ষে।
এক্ষেত্রে ছেলে শিশুরা মেয়ে শিশুদের চাইতে শারীরিক শাস্তি বেশি ভোগ করে। ছেলেশিশু শতকরা ৮৮.৪ আর মেয়েশিশু ৮৪.১। শতকরা ৫৫ জন শিশু জানিয়েছে যে, তারা পরিবারের ভেতরেই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। গৃহে মেয়েশিশুর (৫০%) চাইতে ছেলেশিশুই (৬০%) বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত মোট ১১টি জেলায় এই জরিপ চালানো হয়। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা ও রাঙামাটি। মোট ৫ হাজার ৭৪ জন শিশুর উপর জরিপটি চালানো হয়েছে। এদের মধ্যে শহরের ৩১৩৪ জন শিশু ও গ্রামের ১৯৪০ জন শিশু রয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী শতকরা ৩৪ জন শিশু বলেছে যে, তারা পর্ণগ্রাফি দেখেছে। এর চাইতেও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে শতকরা ৭৫.১ জন শিশু, যাদের মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন আছে, তারাও পর্ণগ্রাফি দেখেছে। অন্যদিকে শতকরা ২৬ জন মেয়ে শিশু বলেছে যে, তারা আত্মীয়দের সাথে পণগ্রাফি দেখেছে। আর শতকরা ১৪.৪ জন মেয়েশিশু দেখেছে অনাত্মীয়দের সাথে।
আরো পড়ুন : এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাঙামাটিতে সাংবাদিক গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ