টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ভেঙে পড়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে টেলিযোগাযোগ। বন্যার ফলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় সিলেট অঞ্চল এখন সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন বলা চলে। বন্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জও। চরম প্রতিকূল এই পরিস্থিতির মধ্যে সিলেটবাসীর জন্য আরও দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে আবহাওয়া পূর্বাভাসের বিভিন্ন মডেল।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আগামী তিন দিনে সিলেটের বন্যার চরম অবনতির প্রবল সম্ভাবনা নির্দেশ করছে আবহাওয়া পূর্বাভাসের মডেলগুলো। এসব মডেল প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ নির্ভুল তথ্য দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আগামী তিন দিনে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী মেঘালয় পর্বত এলাকায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল অনুসারে প্রায় ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আমেরিকান মডেল বলছে প্রায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের মডেলের পূর্বাভাস আরও ভয়াবহ, সেটি বলছে প্রায় ১১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ফ্রান্সের মডেল অনুসারে প্রায় ৬৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
মোস্তফা কামাল পলাশ আরও জানান, আগামী তিন দিনে ভারতের আসাম রাজ্যের বক্ষমপুত্র নদের অববাহিকায় ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে রবিবারের (১৯ জুন) মধ্যে তিস্তা ও যমুনা নদীর তীরবর্তী জেলাগুলোতে বন্যা শুরু হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ভিত্তিক বন্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে সিলেট বিভাগের প্রায় ৮০ এর বেশি স্থল ভাগ বর্তমানে পানির নিচে রয়েছে। আমেরিকার ম্যারিল্যালন্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর বন্য পূর্বাভাষ কেন্দ্রের তথ্য অনুসার শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল ৬টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সামনে সুরমা নদীতে সেকেন্ডে ১২ হাজার ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। পানির উচ্চতা বিপদসীমার প্রায় ১ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের (আইএমডি) বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতপ্রবণ এলাকা ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা জুন মাসে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস বলছে, চেরাপুঞ্জিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের উজানে আসামে গুয়াহাটিতে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। ওই দুই এলাকার ভাটি এলাকা হিসেবে বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রামে ওই পানি নামা শুরু করবে। এর আগে থেকেই ওই এলাকায় এমনিতেও বৃষ্টি বেশি ছিল। এর সঙ্গে নতুন পানি যোগ হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে, শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকে সিলেট বিভাগের সব কটি নদ–নদীর পানি ও উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। দেশের বিভিন্ন নদ–নদীর ১০৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৮৬টির পানি বাড়ছে, ২০টির কমছে। সংস্থাটির পূর্বাভাস বলছে, আগামী তিন দিন উজানে ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশ অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আরো পড়ুন : চরম মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা সুনামগঞ্জে, ১০ ঘণ্টা ধরে সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন