প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সমর্থন দিয়েছে বলেই আজ পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। প্রয়োজনে দেশের উন্নয়নে জীবন দিয়ে হলেও কাজ করে যাব।
আজ শনিবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতাদের ‘আওয়ামী লীগ কোনো দিনও পদ্মা সেতু করতে পারবে না’ এ কথার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে খালেদা জিয়াকে বলছি, আসুন, দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে যেমন আমরা খাদ্য, বিদ্যুৎ ও গৃহহীনদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আরো উন্নত জীবন যেন আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা পায় তার ব্যবস্থাও আমি করব। বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ, আপনাদের পাশেই আমি আছি। আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে সব সময় প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ২০০১ সালে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও খালেদা জিয়া সরকারে এসে সেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। আবার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে বয়সের কারণে চলে যেতে হলো, তখন তিনি আমেরিকায় গিয়ে তদবির করে ওয়ার্ল্ডব্যাংকের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলেন। সে সময় বলা হলো দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু কে দুর্নীতি করেছে। যে সেতু আমাদের প্রাণের সেতু, যে সেতুর সঙ্গে আমার এই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত। এই সেতু নির্মাণে কেন দুর্নীতি হবে?
জাতীয় সংসদে তখন ঘোষণা হলো, ‘বাংলাদেশ বসে থাকবে না, আমরা নিজের টাকায় এই পদ্মা সেতু তৈরি করব উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে অনেকভাবে বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তাদের একটা ধারণা ছিল যে বাংলাদেশ নিজের টাকায় এই সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু জনগণের শক্তিতে আস্থা রেখেছিলাম।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের পর আমার উদ্যোগে জনগণ ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসে এবং আমার মাঝেও শক্তি সঞ্চারিত করেছে বলেই আজকে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছেও এ জন্য শুকরিয়া জানান।
আর কাউকে বর্ষাকালে খরস্রোতা পদ্মা আর পাড়ি দিতে হবে না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আর কাউকে এই পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে বাবা, মা, ভাই-বোন, সন্তান বা আপনজনকে হারাতে হবে না। আপনারা সেখানে নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থাই আমরা করে দিয়েছি। আর যারা এই সেতু নির্মাণে বাধার সৃষ্টি করেছিল তাদেরকে এই পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে উপযুক্ত একটা জবাব আমরা দিতে পেরেছি- না, বাংলাদেশ পারে। আর বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।
’৭৫-এ বাবা, মা, ভাইদের হারানোর পর ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর একরকম জোর করেই নির্বাসিত জীবন থেকে তাঁর দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করে বলেন, নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে ফিরে এসেছি এই বাংলাদেশে। সমগ্র বাংলাদেশ তখন ঘুরে বেড়িয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আপনাদের, এই দেশ আমাদের। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এবং এই দেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী লিটন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিস-অর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি সভা পরিচালনা করেন।
আরো পড়ুন : জেনে নিন পদ্মা সেতুতে কি কি বিশ্বে প্রথম