স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখতে আজ থেকেই পরিবহনযোগে রাজধানী যাচ্ছেন বেনাপোলসহ ভারত থেকে আগত পাসপোর্ট যাত্রীরা। যাত্রীদের আবেগ ও চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবহন ব্যবসায়ীরা এ রুটে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগেও তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন।
বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে গতকাল শনিবার।
আজ থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে যান চলাচলের জন্য। বেনাপোলসহ ভারত থেকে আগত পাসপোর্ট যাত্রীরা সড়কপথে এত দিন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে রাজধানীতে যেতেন। সড়কপথে এটি ছিল প্রধান মাধ্যম। মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মার ওপর স্বপ্নের সেতু নির্মিত হওয়ায় এখন এ অঞ্চলের মানুষের ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ হবে। বেনাপোল থেকে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় যাওয়া যাবে রাজধানী ঢাকায়। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি ব্যয়ও সাশ্রয় হবে।
কিন্তু সাধারণ মানুষের পদ্মা সেতু দেখতে দেখতে ঢাকায় যেতে অপেক্ষা বাড়ার আশঙ্কা ছিল। কারণ এ জেলার পরিবহন মালিকরা পুরনো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটেই গাড়ি চালানোর কথা ভাবছিলেন। নতুন রুট মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু জনমানুষের আবেগ ও চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে কিছু কিছু পরিবহন এ রুটে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। এ খবরে উচ্ছ্বসিত বেনাপোলসহ যশোরবাসী।
ভারত থেকে আসা নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট যাত্রী শংকর কুমার সাহা বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ আগে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দিয়ে এসেছিলাম। ঘণ্টা দুয়েক ঘাটে আটকে ছিলাম। আজ ভারত থেকে ফিরে শুনেছি পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি যাবে। আমি সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কেটে নিয়েছি। স্বপ্নের সেতু দেখতে দেখতে বাড়ি পৌঁছে যাব। ‘
একই কথা বললেন ঢাকার তাঁতীবাজারের অমলেশ সরকার। তিনি বলেন, ‘আমিও পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য সোহাগ পরিবহনে টিকিট কেটেছি। ভারতে বসে টিভির পর্দায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেখেছি। আবেগ ধরে রাখতে পারেনি। ‘
টঙ্গীর আবুল কালাম বলেন, ‘আমি আগেই শুনেছিলাম ২৫ তারিখ উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। এক দিন পর খুলে দেওয়া হবে যান চলাচলের জন্য। সে কারণে আমি আজ ফিরলাম ভারত থেকে। ঢাকায় যাব বাসে চড়ে স্বপ্নের সেতুর ওপর দিয়ে। এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে। ‘
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি বেনাপোল-ঢাকা ট্রেনে যাওয়া-আসা করি। ট্রেনেও ছয় ঘণ্টা লাগে। পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ার জন্য গ্রীন লাইনের এসিতে যাচ্ছি। রাতের আলোতে পদ্মা সেতু দেখতে দেখতে ঢাকায় পৌঁছে যাব। সময় লাগবে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা। ‘
যশোরের ঈগল পরিবহনের স্বত্বাধিকারী পবিত্র কাপুড়িয়া বলেন, ‘আমাদের নন-এসি পরিবহনগুলো নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে। আপাতত সাড়ে ৫০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য পরিবহনগুলোও চলাচল শুরু করছে আজ থেকে। ‘
সোহাগ পরিবহনের বেনাপোল ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, আজ রবিবার থেকে চারটি করে পরিবহন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে। এর মধ্যে একটি নন-এসি ও তিনটি এসি বাস চলবে। তিনি বলেন, বেনাপোল-যশোর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা দিয়ে পদ্মা সেতু পার হবে পরিবহনগুলো। কেননা নড়াইলের কালনা সেতু চালু না হওয়ায় এই বিকল্প ব্যবস্থা।
গ্রীন লাইনের ম্যানেজার সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘আমাদের পাঁচটি এসি পরিবহন বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাবে। বেনাপোল থেকে ১৫০০ টাকা এবং যশোর থেকে ১৩০০ টাকা দিয়ে যাত্রীরা যেতে পারবেন। আপাতত পরিবহনগুলো ফরিদপুর হয়ে যাবে। এতে মাগুরার কিছু যাত্রী পাওয়া যাবে। ‘
যশোর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান বাবলু বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চলাচল করলে জ্বালানি খরচ কমবে। আজ থেকে কিছু পরিবহন পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল শুরু করছে। কালনা সেতু চালু হলে পূর্ণাঙ্গভাবে সবাই চলাচল করবেন।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে বেনাপোল বন্দরসহ যশোরের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। এখান থেকে আমদানীকৃত পণ্যের পাশাপাশি সব ধরনের উৎপাদিত পণ্যে সহজে ঢাকাতে পৌঁছবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে কালনা সেতুর উদ্বোধন হবে। তত দিন যশোর থেকে মাগুরা হয়ে ফরিদপুর দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা দিয়ে রাজধানীতে পৌঁছবে যাত্রীরা।
আরো পড়ুন : প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক সিরিজ জিতল বাংলার মেয়েরা