সাগরে মাছ ধরার সরকারি ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষে এ বছর সুবিধা করতে পারেননি জেলেরা। লঘুচাপের কারণে ফিরে এসে ১৫ দিন উপকূলে অবস্থান করেন। আবহাওয়ার উন্নতি দেখে বুধবার একের পর এক ট্রলার বঙ্গোপসাগরে ছোটে। জেলেপাড়ায় নেমে আসে উৎসব। কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে বৈরী আবহাওয়া দেখা দিলে বিপুলসংখ্যক জেলেসহ অসংখ্য ট্রলার উপকূলে ফিরতে থাকে। এ সময় বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও নোয়াখালীর অন্তত সাতটি ট্রলার ডুবে গেছে। এতে এখন পর্যন্ত তিন জেলের মৃত্যু ও কমপক্ষে ২০২ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। ১৩টি ট্রলারের সঙ্গে মালিকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে জেলেপাড়ার বাতাস। এখন সেখানে উৎসবের বদলে চলছে কান্নার রোল।
তবে পটুয়াখালীর নিজামপুর কোস্টগার্ডের লে. শাফিউল কিঞ্জর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত মোট ১৬টি ট্রলার নিখোঁজের তথ্য তাঁরা পেয়েছেন। ট্রলারডুবির ঘটনায় নোয়াখালীর হাতিয়ায় তিন জেলের মরদেহ ও অন্যান্য এলাকা থেকে ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ জেলের সন্ধানে অভিযান চলমান রয়েছে।
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে ঝড়ে পড়ে উপজেলার পাঁচটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে এমভি মায়ের দোয়া, এমভি আবদুল্লাহ-১, এমভি আবদুল্লাহ-২, এমভি ভাইবোন ও এমভি জেদনী নিখোঁজ হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে এমভি আবদুল্লাহ-২ এর সন্ধান পেলেও জেলেসহ অন্য ট্রলারের হদিস মেলেনি। এসব জেলে পরিবার চরম উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেসা খানম বলেন, জেলে ও ট্রলারের সন্ধান চলছে। নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সান্ত্বনা দিয়েছি।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে শুক্রবার বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া এফবি আমজাদ ট্রলারের ১৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে চালনার বয়া এলাকা থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। এফবি সাগরকন্যা ট্রলারের সাহায্যে গতকাল বিকেলে তাঁরা পটুয়াখালীর কুয়াকাটার আলীপুর মৎস্য বন্দরে পৌঁছেছেন।
তবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবে যাওয়া পাঁচটি ট্রলারের একজনের সন্ধান মিলেছে, ১৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, শুক্রবার ছয়টি ট্রলার ডুবে ৩১ জেলে নিখোঁজ হন। তাঁদের মধ্যে এসাহাক মাঝির (৪৫) সন্ধান পাওয়া গেছে। নিখোঁজরা বাড়ি ফিরে না আসায় তাঁদের পরিবারে আহাজারি চলছে।
হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী বঙ্গোপসাগরে ধমারচর এলাকায় শুক্রবার ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ জেলে বেলাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে দমারচর এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। বেলাল ভোলার মনপুরা উপজেলার কান্দিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার একই ট্রলারের দুই জেলে- মাইন উদ্দিন ও রাফুল ইসলামের লাশ ও ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। হাতিয়া থানার ওসি আমির হোসেন জানান, লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, চরফ্যাসনের দক্ষিণ উপকূলে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বৈরী আবহাওয়ায় ১১৪ জেলেসহ ৯টি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জেলেদের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
মাইনউদ্দিন মৎস্যঘাট আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান জানান, চার দিনে বেশ কয়েকটি ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সাগরে ইলিশ ধরতে যান। এর মধ্যে ৯টি ট্রলারের সঙ্গে মালিকরা যোগাযোগ করতে পারছেন না। এসব ট্রলারে ১১৪ জেলে রয়েছেন। তাঁদের ভাগ্যে কী জুটেছে তা অনিশ্চিত।
আরো পড়ুন : ডিআইজি ৩০ মিনিট যানজটে থাকার একটু পরেই ওসি প্রত্যাহার!