ব্যান্ডেজে মোড়া গৃহকর্মীকে বিদায় দিলেন স্ট্যাম্পে সই রেখে; অত:পর নিপার মৃত্যু

ক্রাইম নিউজ প্রচ্ছদ শিশু অধিকার শিশু নির্যাতন শিশু শ্রম শিশু/কিশোর

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় পরিচারিকার কাজ করছিল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের নিপা আক্তার (১২)। দিনমজুর বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে দেখা না করার শর্তে প্রতি মাসে নিপার পরিবারের কাছে দুই হাজার করে টাকা পাঠাতেন ওই ব্যবসায়ী। তবে গত পাঁচ দিন আগে বাবার কাছে তিন হাজার টাকা পাঠিয়ে বলা হয় দ্রুত ঢাকায় যেতে।

পরদিন ঢাকায় গেলে দিনমজুর মো. মুর্শেদ আলী জানতে পারেন একটি ক্লিনিকে ভর্তি মেয়ে। সেখানে গেলে বাড়িওয়ালাসহ বেশ কিছু লোক গত মঙ্গলবার কিছু কাগজে সই নিয়ে মেয়েকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু মেয়ের অবস্থার অবনতি হলে পরদিন সকালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত শুক্রবার দুপুরে নিপার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনা জানিয়ে নিপার বড় বোন কল্পনা আক্তার (২৪) সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বাড়িওয়ালার সহায়তায় একটি চক্র তাঁর বোনের কিডনি বা অন্য অঙ্গ রেখে দিয়েছে কি না তাঁদের সন্দেহ।

নিপার বোন কিংবা মা-বাবা কেউ ওই ব্যবসায়ীর নাম বলতে পারেননি। বাড়ি ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে, শুধু এটুকু জানাতে পেরেছেন। যে নম্বর দিয়ে ব্যবসায়ী ফোন দিয়েছিলেন, সেই নম্বর পরে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

নিপা ঈশ্বরগঞ্জের রাজীবপুর ইউনিয়নের মাছুয়াডাঙ্গা গ্রামের মুর্শেদ আলীর ছোট মেয়ে। গত শুক্রবার বিকেলে ওই গ্রামে গেলে মুর্শেদ জানান, ক্লিনিকে গিয়ে দেখতে পান, মেয়ের শরীরে অনেক যন্ত্রপাতি লাগানো। এতে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি হাসপাতালে থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ব্যবসায়ী বাধা দেন। পরে একাধিক স্ট্যাম্পে সই দিতে বলেন। রাজি না হলে অস্ত্র দেখান। তখন তাঁর স্ত্রী নাসিমা স্ট্যাম্পে সই করেন।

নিপার বড় বোন কল্পনা আক্তার জানান, বাড়িতে আনার পর নিপার বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা দেখেছেন তিনি।

নিপার ভাবি শাহানাজ বেগম বলেন, তিনি ব্যান্ডেজ খুলে দেখেছেন, নিপার তলপেটের দুই পাশে ও বুকে কাটা দাগ। কয়েক দিন আগে অপারেশন করা হয়েছে মনে হচ্ছে।

নিপাকে ঢাকায় নিয়ে কাজে দিয়েছিল লাঠিয়ামারিচরের সামছু মেম্বার নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান, প্রথম মালিক হচ্ছেন হেদায়েত সাহেব। পরে কার বাসায় ছিল তা তিনি জানেন না।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি-৩ ইউনিটে নিপার চিকিৎসা দেওয়া ডা. খালেদ হোসেন জানান, শিশুটিকে ঢাকার মিরপুর পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছে বলে তার স্বজনরা জানিয়েছে। সেখান থেকে চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই অজ্ঞাত কারণে এখানে আনা হয়েছিল। ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পরই সে মারা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, তার শরীরে একাধিক আঘাতের কারণে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়ে মারা গেছে। তার বুক-পেটের বেশ কয়েক জায়গায় ব্যান্ডেজ ছিল। তা ছাড়া উচ্চ ডায়াবেটিস ছিল।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, সুরতহাল রিপোর্টে দেখা গেছে, বুকে ও পেটে অনেক জায়গায় সেলাই ও ব্যান্ডেজ ছিল। পরে জিডির ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। নিপার মা-বাবাকে নিয়ে এসআই আরিফ ঢাকার মিরপুর থানায় গেছেন অভিযোগ করতে।

আরো পড়ুন : মোবাইল গেমে আসক্ত দেশের ছাত্র-যুবসম্প্রদায়, তাদের রুখবে কে?

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *