ভাড়া না থাকায় দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে স্টেডিয়ামে খেলতে যাওয়া কাফির হাতে বিজয়ীর ট্রফি

খেলাধুলা পুরুষ প্রচ্ছদ বিনোদন সফলতার গল্প

মাঠের এক পাশে দাঁড়ানো খুদে ফুটবলার আল কাফির চোখেমুখে বিশ্ব জয়ের আনন্দ। পাইওনিয়ার ফুটবল লিগের ফাইনালে আজ কুড়িগ্রামের জারা গ্রীন ভয়েস কিশোর বাংলা ক্লাবকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে বরিশাল ফুটবল একাডেমি। নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ গোলে সমতা ছিল ম্যাচে। ২-৩ গোলে পিছিয়ে পড়া বরিশালকে দুর্দান্ত এক গোলে খেলা টাইব্রেকারে নিয়ে গেছে দলের উইঙ্গার আল কাফি।

মাগুরা আসাদুজ্জামান স্পোর্টস একাডেমির ফুটবলার কাফি এবারই প্রথম সুযোগ পেয়েছে পাইওনিয়ার ফুটবল লিগে খেলার। কিন্তু কোচ জাকির হোসেন ট্রায়ালের জন্য যখন ঢাকায় আসতে ফোন করেছিলেন, তখন কাফির কাছে কোনো টাকা ছিল না। উপায় না দেখে মায়ের মুরগি বিক্রি করে ঢাকায় আসে কাফি।

আরো পড়ুন : ২৪ ঘণ্টায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকারও বেশি টোল আদায় করল বঙ্গবন্ধু সেতু

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সেই গল্পই বলছিল মাগুরা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র, ‘আমাদের সংসারের অবস্থা ভালো না। বাবা দলিল লেখকের সহকারীর কাজ করেন। আমি যখন ঢাকায় আসতে চেয়েছিলাম, তখন দেওয়ার মতো কোনো টাকা ছিল না বাবার। আমার মায়ের পোষা মুরগি একঝাঁক বাচ্চাসহ বিক্রি করি এক হাজার টাকায়। এরপর সেই টাকা নিয়ে ঢাকায় এসে ট্রায়াল দিয়েছি।’

শুরুতে টাকার অভাবে কাফি খালি পায়ে অনুশীলন করত মাগুরা স্টেডিয়ামে। এরপর তার চাচা এক জোড়া বুট উপহার দেন। এমনও হয়েছে অনুশীলনে যাওয়ার গাড়ি ভাড়াও থাকত না কাফির কাছে, ‘আমাদের বাড়ি মাগুরা সদরের শিবরামপুরে। সেখান থেকে শহরে আসতে ইজিবাইকে ২০ টাকা ভাড়া লাগে। অনেক সময় ভাড়া থাকে না বলে আমি দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে স্টেডিয়ামে যাই।’

৭ নম্বর জার্সিতে খেলা কাফির প্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দেশে ভালো লাগে আবাহনীর উইঙ্গার রাকিব হোসেনের খেলা।

আজ সমতায় ফেরানো কাফির গোলটা ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। উড়ে আসা বলটা প্রথমে বুকে নামায় সে। এরপর ভলিতে গোল করেই উল্লাসে মেতে ওঠে। লিগে মাত্র ৩ গোল করলেও কাফির গোলে সহায়তা ছিল ৬টি। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় খেলতে পেরে খুশি কাফি, ‘এই মাঠটা অনেক সুন্দর। প্রথম যেদিন এখানে লিগের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসেছি, সেদিনই ভেবেছিলাম এই মাঠে খেলব। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

আরো পড়ুন : কুরআন শরীফে কুরবানীর ইতিহাস

বরিশাল ফুটবল একাডেমির অধিনায়ক আহসান উল্লাহও কাফির মতো সংগ্রাম করে এসেছে ঢাকায় ফুটবল খেলতে। আহসান উল্লাহর বাবা খুলনার রূপসায় চায়ের দোকানদার। ছেলেকে এক জোড়া বুট কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই শাজাহান হাওলাদারের। অন্যের বুট নিয়েই খেলত আহসান উল্লাহ। কিন্তু পাইওনিয়ারে অংশ নেওয়ার আগে এলাকায় একটি টুর্নামেন্টে খেলে ১ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে বুট কিনে এবার ঢাকায় খেলতে এসেছে।

এবারের লিগে প্রথমবার খেলেই ১৩ গোল করেছে স্ট্রাইকার আহসান উল্লাহ। বরিশালের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করেছে সে। খুলনা গাজী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পেরে ভীষণ খুশি, ‘জয়ের ব্যাপারে আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল। প্রথমবার পাইওনিয়ারে খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এই আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না।’

ফুটবল খেলেই বাবার দুঃখ ঘোচাতে চায় আহসান উল্লাহ, ‘বাবা সব সময় চান, যেন আমি বড় ফুটবলার হই। আমি কখনো বাবার সঙ্গে দোকানে বসতে চাইলেও খেলতে পাঠিয়ে দেন। আমি বড় ফুটবলার হয়ে বাবার হাতে অনেক টাকা তুলে দিতে চাই। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন আমার।’

আরো পড়ুন : শিনজো আবের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *