সিলেট-ভোলাগঞ্জে ত্রাণের আশায় সড়কে হাজার হাজার মানুষ

জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক ধরে চললে সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের একটু আগে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক। ১৬০ একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে নির্মিতব্য এ পার্ক হয়ে উঠেছে সীমান্তবর্তী এলাকার বন্যাদুর্গত মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকা এ পার্কে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করেন ত্রাণের আশায়। বস্তুত এ সড়কের প্রায় পুরোটাজুড়ে প্রতিদিন ত্রাণের আশায় থাকেন হাজার হাজার মানুষ।

ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ত্রাণ নিয়ে আসছেন মানুষ। তাঁদের গাড়ি দেখলেই ছুটছেন আবালবৃদ্ধবনিতা। পার্শ্ববর্তী তেলিখাল থেকে মায়ের সঙ্গে আসা ৯ বছরের রাহেলা জানায়, বন্যায় ঘরের সব নষ্ট হয়ে গেছে। বইপত্রও ভিজে নষ্ট হয়েছে। আবার স্কুলে যেতে চাইলেও এখন ক্ষুধার তাড়নায় সে এসেছে ত্রাণ নিতে। একই জায়গায় ত্রাণের আশায় শত শত মানুষের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ানো তেলিখালের তেরা মিয়া বলেন, কোনো কাজ নেই। ত্রাণ ছাড়া তাই উপায় নেই।

সীমান্তবর্তী উপজেলার কান্দিবাড়ি, বিলাজুড় চাতলপার, শিমুলতলা, তেলিখাল, আন্দুউরা, গাংপার, শিমুলতলা নয়াগাঁওয়ের মতো অনেকগুলো গ্রামের বাড়িঘরে এখনও পানি। বন্যার পানিতে ধান-চাল সব নষ্ট হয়ে গেছে। সবকিছু পানিতে তলিয়ে থাকায় কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষ কার্যত বেকার। উপজেলার গাংপার গ্রামের আরিফ হাসান বলেন, কোম্পানীগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষ একসময় কোয়ারিতে কাজ করতেন। অনেক দিন ধরে কোয়ারি বন্ধ। এলাকায় তেমন কাজকর্ম নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি দ্রুত কমলেও কুশিয়ারার পানি খুব ধীরে কমছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি কমলেও ময়লা পানি ও আবর্জনায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। নগরীর আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাসাবাড়িতে ফিরছেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন।

হাই-টেক পার্কের ভেতরে বন্যার সময় হাজারো মানুষের সঙ্গে আশ্রয় নেয় শত শত গবাদি পশু। উপজেলার আন্দুউরা গ্রামের মৎস্যজীবী লক্ষ্মীকান্ত দাস বলেন, ঘরের পানি নেমেছে। তার পরও রয়ে গেছি। কারণ বাড়িতে গরুগুলোর খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। সব খড় ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে থাকলে অবুঝ পশুগুলো খাবার পাচ্ছে। আর বিভিন্ন লোকজন এসে ত্রাণ দিচ্ছে।

বন্যাকবলিতদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যানে খাবার ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসছেন। রাজনীতিবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিদিন ত্রাণ আসছে। গতকাল তিনটি কাভার্ডভ্যানে ত্রাণ নিয়ে.আসেন নায়ক অনন্ত জলিল। এদিন সিলেটে ত্রাণ বিতরণে আসেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। তেলিখাল এলাকার দারুস সুন্নাহ মুহাম্মদিয়া মাদ্রাসার সামনে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে তিনি থামতেই ভিড় করেন শত শত মানুষ। আব্দুস শহীদ বলেন, মৌলভীবাজারে তাঁর এলাকায় বন্যা নেই, অবস্থা ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাই কোম্পানীগঞ্জে ত্রাণ বিতরণে এসেছেন। এরপর সুনামগঞ্জে যাবেন বলে জানান সাবেক এই চিফ হুইপ।

রাজধানী ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের চার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কোম্পানীগঞ্জে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ফাহাদ আহমদ বলেন, স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী কিনে তাঁরা সিলেটে বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতার জন্য নিয়ে এসেছেন। এই ত্রাণ তাঁরা তুলে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কের সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে।

এ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর দেওয়ান মো. মুক্তাদির বলেন, প্রতিদিন মানুষজন ত্রাণ নিয়ে আসছেন; সরাসরি উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ তাঁদের কাছে দিলে তা বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ত্রাণের আশায় নৌকায় সড়কে সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন পশ্চিম বর্ণি গ্রামের হোসনা বেগম। তিনি বলেন, স্বামী মারা গেছেন। মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছিলাম। দুই সন্তান রেখে তার স্বামীও ছেড়ে গেছে। সেও আমার কাছে থাকে। দু’বার বন্যায় ঘরের সব নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষজন যদি কিছু দেয়, এই আশায় রাস্তায় বসে থাকেন। কিছু পেলে লোকজনের নৌকায় বাড়ি ফিরে যান।

আরো পড়ুন : এমপিকে সপরিবারে মেরে জেলে যাওয়ার কথা বলেছেন পৌর মেয়র

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *