ছাত্রদলের ক্যাডারদের হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেত্রীর বিভিশিকাময় আজ সেই দিন

অনুসন্ধানী ক্রাইম নিউজ নারী নারী অন্যান্য প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

আমরা আত্মবিস্মৃত জাতি। যে কোন ঘটনাই কিছু দিন পর ভুলে যাই নিজের অজান্তে। শুধু সেই ভুলতে পারেননা যে ঘটনার শিকার। ভুলতে চাইলেও বিভিষিকাময় সেই দিনগুলোর কথা বারবার মনে করিয়ে দেয় শরীরের বিভিন্ন ক্ষত আর ক্ষতের যন্ত্রণা। প্রতিপক্ষের আক্রমনে রক্তাক্ত হয়ে যে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি আর কেউ নন, আমার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল হিসেবে স্বীকৃত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের ইডেন মহিলা কলেজ শাখার প্রাক্তন সাধারন সম্পাদক চন্দ্রা রায় চম্পা। তার জীবনে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক কাহিনী নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

ঘটনা ২০০৩ সালের ১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১ টা। ওইদিন ক্লাশ শেষে চন্দ্রা রায় চম্পা ও তার বান্ধবী গুলশান আরা বর্ষা নোটস ফটোকপি করতে কলেজ ক্যাম্পাসের ফটোকপি দোকানে পৌঁছলে ছাত্রদলের ক্যাডাররা তাদের কাছে যেতে বলে হাক ছাড়ে। এতে সাড়া না দেওয়ায় ছাত্রদলের ক্যাডাররা তাদের ধাওয়া করে। জীবন বাঁচাতে তারা তখন ক্লাসরুমের দিকে দৌড় দেন। এ সময় বর্ষা পিছনে পরে যাওয়ায় তাকে সাথে নিতে ফিরে আসেন চম্পা। সাথে করে নিয়েও যান টিচার্স রুম পর্যন্ত। কিন্তু সেখানে থাকা এক ম্যাথমেটিকস্ এর শিক্ষক চম্পাকে আশ্রয়না দিয়ে রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করেদেন। চম্পাকে ধরে ফেলে ছাত্রদলের ইডেন কলেজ শাখার ক্যাডাররা। চম্পা কেন তারা করছে জানতে চাইলে তারা হুমকি দিয়ে বলে ‘‘ছাত্রলীগ করস আবার ক্যাম্পাসে আসছস, আজ তোরে শেষ করে দেব”। অপর ছাত্রদল ক্যাডার চম্পাকে উদ্দেশ্য করে বলে যদি বাঁচতে চাস তাহলে কাল থেকে ছাত্রদলে যোদ দিবি আর কোনদিন বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে আনবিনা। আর সেটা লিখিত দিতে হবে। এই শর্তে চম্পা রাজি না হলে তারা স্বদলবলে চম্পার উপর আক্রমন করে। এরপর চম্পাকে অডিটরিয়ামের ভিতরে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে বেধরক মারপিট করতে থাকে। মারপিটের এক পর্যায়ে সদ্য অরারেশন করা ব্রেস্টে একাধিকবার আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। যখন তীব্র ব্যাথা আর যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলেন তখন চন্দ্রা রায় চম্পা। তারা অট্টহাসি হাসছিল আর বলছিল শালী এখনো মরেনাই ওর মুখ ছেইচ্ছা দে আর যেন বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে না পারে। এর এক পর্যায়ে চম্পা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তারপরও তাকে পিঠে এলোপাথারী হিলজুতা পরা পা দিয়ে গুড়ি মারতে থাকে। যে কারনে তার পিঠের হাড় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবার পাশাপাশি মাংস গুলো থেথলে যায়। এরপর তারা চম্পাকে মৃত ভেবে টেনে হিচরে ক্যাম্পাসের বাহিরে রাস্তার মাঝখানে শুইয়ে রাখে।

এতেই তারা ক্ষান্ত হননি চালকদের চম্পার উপর বাস চালিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছিল। এসময় রাস্তায় অনেক যানবাহন আটকা পরে। সেসময় তার বন্ধবী বর্ষা তাকে বাঁচানোর জন্য উপস্থিত জনতার কাছে কাকুতি মিনতি করতে থাকে। এসময় বাস থেকে এক যুবক নেমে চট করে তাকে কাঁধে নিয়ে পাশে থাকা একটি রিক্সায় চেপে বসেন। বর্ষাও দৌড়ে ওই রিক্সায় ওঠে পড়েন। রিক্সাওয়াল তাদের নিয়ে যাত্রীর কথামত পৌঁছান ঢাকা মেডিকেলে বেলা ১টার দিকে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি জেদ্দা পারভীন খান রিমিসহ অনেক নেতা-কর্মীরা সারাদিন পাশে থেকে চিকিৎসায় সহযোগিতা করছিল। সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত অবজারভেশনে নেয়া হয় চম্পাকে। সর্বক্ষন খবর রাখতে থাকেন তখনকার ছাত্রলীগ ওকে কমিশনের চেয়ারম্যান ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের।

চম্পার আশংকাজনক অবস্থা দেখে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি এসআর পলাশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত শিকদারকে বলেন চম্পাকে আর হয়তে বাঁচানো গেলোনা। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ তাৎক্ষনিক একটি মৃত্যু মিছিল বের করে।

এদিকে রাত ১২টার দিকে চম্পার জ্ঞান ফিরে আসে। ইডেন কলেজে সংঘর্ষের খবর ০২/০৪/২০০৩ তারিখ সংবাদ, ভোরের কাগজ, জনকন্ঠসহ সকল জাতীয় দৈনিকে বিভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত হয়। তখনকার ছাত্রদল ইডেন কলেজ শাখার আহবায়ক নিশিতা, যুগ্ম আহবায়ক রুমাসহ ৫ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে চম্পা বাদী হয়ে হাসপাতাল থেকেই লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদ নানা কর্মসূচী দেয় ছাত্রলীগ।

চম্পা সমরিতা হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ্য হলে বর্তমান আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগের সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুসহ নেতাকর্মীর হুইল চেয়ারে করে সুদাসনদে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার সাথে দেখা করাতে। এসময় শেখ হাসিনা তার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেন এবং তার সব দায়-দায়িত্ব নেন। চম্পা ফিরে যান তার বাসায়।

পরবর্তীতে মিরপুর ক্যান্সার হাসপাতালের ব্রেস্ট স্পেশালিষ্ট অধ্যাপক আব্দুলহাই এর কাছে, পরে তৎকালিন ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত শিকদারের সুপারিশে ট্রমা সেন্টারে অধ্যাপক সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রী আ. ফ. ম. রুহুল হক এর কাছে চিকিৎসা নিতে থাকেন।

পরবর্তিতে তার অবস্থার কথা জানতে শেখ হাসিনা তৎকালীন লিয়াজো অফিসার বজলু সাহেবের হাতে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য পাঠান এবং আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য এ্যাপোলোহাসপাতালে ভারতীয় এক ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিলে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। আবারো ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। টানা ছয় বছর সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে নিঝুম-তানিয়ার কাছে ইডেন ছাত্রলীগের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।

চম্পা বলেন, সবচেয়ে বেশী আঘাত পেয়েছিলেন মেরুদন্ডে। থেতলানো মাংসের ব্যাথায় বিছানা থেকে উঠতে পারতামনা। বিছানাতেই মলমুত্র ত্যাগ করতে হতো। এছাড়া অপারেশনকৃত ব্রেস্টে আঘাত পাওয়ায় সেখানে ঘা হয়ে গেছিল। যার অসহ্য যন্ত্রনায় অনেক রাতে ঘুমাতে পারিনি। দু:সহ সেসব স্মৃতি মনে করে এখনো শিহরে উঠি। ভুলতে পারিনা মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার অনুভুতি। এখনো মাঝে মাঝে তীব্র ব্যাথা অনুভব করি। বর্তমানে আমি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশাববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক বিভাগীয় চেয়ারম্যান সালেক স্যার, অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার স্যার ও ফিজিয়ান আজাদ ভাই এর তত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছি।

আমি কৃতজ্ঞ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কারিগর শেখ হাসিনা তখনকার ছাত্রলীগ ওকে কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বর্তমান আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্যার, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ তৎকালীন সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের প্রতি। কৃতজ্ঞ বান্ধবী শুলশান আরা বর্ষা ও অজ্ঞাত সেই যুবক যিনি আমাকে তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। চস্পা আরো অনুরুধ করেন যিনি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে আমার ২য় জীবন দিতে সহযোগীতা করেছেন তিনি যদি বেঁচে থাকেন আর oknews24bd.com এর এই সংবাদটি দেখে থাকেন তাহলে অবশ্যই যেন একবার দেখা করেন।

দুবৃত্তায়ন আর ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতির অবসান হোক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পৌঁছে যাক উন্নতির চরম শিখরে এমনই স্বপ্ন দেখেন চম্পা।


এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন oknews24bd.com এর অনুসন্ধানী পাতায় oknews24bd.com ইউটিউভ চ্যানেলের ‘রিয়াললাইফ” অনুষ্ঠানে।

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *