তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় সেরা কক্সবাজার ‘পালস-বানি একাডেমি’র সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েরা

খেলাধুলা প্রচ্ছদ বিনোদন সফলতার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার শহরের বাইপাস সড়কের পাশে পালস-বানি একাডেমি। প্রায় দুই বছর ধরে এই একাডেমিতে ৩২ জন সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েকে বিনা মূল্যে লেখাপড়ার পাশাপাশি আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তায়কোয়ান্দো শেখানো হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের বিজয় দিবস তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা ২০২২–এ এই একাডেমির খেলোয়াড়েরাই সোনার পাঁচটি, রুপার তিনটি ও তামার চারটি পদক অর্জন করেছে।

এর আগে ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় ২০২২-এ একাডেমির মেয়েরা সোনার ১টি ও তামার ৭টি পদক অর্জন করে।

প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে চলা এই অদম্য খেলোয়াড়দের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পালস-বানি একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, বিজয়ের মাসে সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের এ অসামান্য অর্জন কক্সবাজারবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।

বিজয় দিবস তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় একটি সোনা ও একটি রুপার পদক পেয়েছে একাডেমির দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ আদর্শগ্রামের রিয়া মনি। দুটি তামার পদক পেয়েছে একই গ্রামের তানিয়া আকতার। সে পড়ছে নবম শ্রেণিতে। একটি সোনার পদক পেয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্রী ও রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি গ্রামের সাদিয়া আক্তার। একটি সোনার পদক পেয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্রী ও দক্ষিণ আদর্শগ্রামের রাজিয়া আক্তার, একটি সোনা ও একটি রুপার পদক পেয়েছে একই গ্রামের দশম শ্রেণিতে পড়া রেখা মনি।

এ ছাড়া একাডেমির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আদিবা, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রিয়াদ হোসেন ও ছাত্রী রেশমি আক্তার একটি করে রুপার ও সপ্তম শ্রেণির শাহেদ হোসেন একটি তামার পদক পেয়েছে।

এ ছাড়া জাতীয় তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা ২০২২–এ একাডেমির শিক্ষার্থী রিয়া মনি পেয়েছে একটি সোনার ও একটি তামার পদক। একই একাডেমির তানিয়া আক্তার তিনটি, সাদিয়া আক্তার একটি, রাজিয়া আক্তার একটি ও রেখা মনি একটি তামার পদক পেয়েছে।

তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষক মো. আবদুল্লাহ বলেন, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, তার প্রমাণ একাডেমির ছেলেমেয়েরা। অভাব দূর করতে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার পাশাপাশি তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণ নিতেও আন্তরিক।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে একসময় শামুক-ঝিনুকের পণ্য বিক্রি করত কিশোরী তানিয়া আকতার (১৫)। করোনা মহামারিতে পর্যটকের আনাগোনা বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসা অচল হয়ে যায়। তানিয়ার বাবাও অসুস্থ। তাই পরিবারে তেমন কোনো আয়রোজগার নেই। বিকল্প আয়ের পথ বের করতে বন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করত সে। ২০২১ সালে ১ মার্চ ভর্তি হয় পালস-বানি একাডেমিতে। বিনা মূল্যে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নেয় আত্মরক্ষার কৌশল তায়কোয়ান্দো। এখন তার সুনাম সব খানে। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি তায়কোয়ান্দোর প্রশিক্ষক হতে চায় তানিয়া।

রিয়া মনিও একসময় সমুদ্রসৈকতে পযটকদের কাছে শামুক-ঝিনুকের মালা বিক্রি করে সংসার চালানোর দায়িত্ব নিয়েছিল। গত বছর মার্চে একাডেমিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে। জাতীয় পর্যায়ে সোনা, রুপা ও তামার পদক পেয়ে মহাখুশি রিয়া মনি বলে, ‘পড়াশোনা করে প্রকৌশলী হব। তারপর মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে খোলার ইচ্ছা আছে।’

ফরাসি বেসরকারি সংস্থা বানি স্ট্রিট একাডেমি ও কক্সবাজারের স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা পালস যৌথভাবে পালস-বানি একাডেমি চালু করে। একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত ৩২ জন শিশুকে নিয়ে মানবিক কার্যক্রম চলছে। তারা এখানে পড়াশোনা ও আবাসিক সুবিধার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে। কিছুদিনের মধ্যে আরও ১৬ জন শিশুকে এখানে ভর্তি করা হবে।

আবু মোর্শেদ চৌধুরী আরও বলেন, ২০২১ সালের ১ মার্চ থেকে এ প্রকল্প শুরু হয়েছে। শহরের দুর্গম এলাকা থেকে পথশিশুদের খুঁজে বের করে একাডেমিতে আনা হচ্ছে। লেখাপড়ায় ভালো করলে তাদের বিদেশে পড়াশোনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

আরো পড়ুন : ৩১ ডিসেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুলশানে ডিএমপির ব্যবস্থা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *