পোশাক ব্যবসায়ী সুমনকে নয়, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক সুমনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ

অনুসন্ধানী আইন-আদালত ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ তথ্য-প্রযুক্তি পুরুষ পুরুষ অধিকার পুরুষ নির্যাতন প্রচ্ছদ মুক্তমত লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

রাজধানীতে সুমন নামের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির বদলে শাহরিয়ার আহমেদ সুমন নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে মিরপুর থানা-পুলিশের বিরুদ্ধে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন তিনি।

শাহরিয়ার আহমেদ সুমনের আইনজীবী শওকত আলম দাবি করছেন, সুমনকে তিনি চেনেন দুই যুগ ধরে। তাঁর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ২০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন সুমন। মিরপুর থানা-পুলিশ ভুলক্রমে প্রকৃত সুমনের বদলে তাঁর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে গত ৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার করেছে।

শওকত আলম ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে কর্মরত।

সাজাপ্রাপ্ত আসামি সুমনের আগের আইনজীবী প্রাণ বল্লভ ঘোষ বলেন, আট বছর ধরে তিনি সুমনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। তাঁর মক্কেলের বাড়ি মিরপুরে। তিনি পেশায় পোশাক ব্যবসায়ী ছিলেন। পাঁচ বছর আগে মামলায় সুমনের সাজা হওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।

এই প্রতিবেদক গ্রেপ্তার শাহরিয়ার আহমেদ সুমনের ছবি দেখান আইনজীবী প্রাণ বল্লভ ঘোষকে। ছবি দেখে তিনি বলেন, এই সুমনের ছবির সঙ্গে তাঁর এক সময়ের মক্কেল সুমনের চেহারার কোনো মিল নেই। যত দূর খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সুমন পলাতকই রয়েছেন।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সুমনকে গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘যে সুমনকে আমি গ্রেপ্তার করে আদালতে তুলেছি, তিনি কাফরুল থানার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাঁর নামে মিরপুর মডেল থানায় একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে। এই সুমন নিজের পরিচয় লুকাতে শাহরিয়ার আহমেদ সুমন নামে জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে পারেন।

এক সুমনের বদলে অন্য সুমনকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, কাফরুলের ভাষানটেক নতুন বস্তি এলাকায় ১৯৯৯ সালের ৯ জুন নুরে জামাল ওরফে কামাল নামের এক কলেজছাত্রের হাত কেটে নেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। তাতে সুমনসহ ছয়জনকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। মামলার এজাহারে সুমনের বাবার নাম লেখা শাহজাহান। ঠিকানা ১০/সি/১৯-১২, মিরপুর। তবে সুমনের স্থায়ী ঠিকানা মামলার এজাহার কিংবা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা নেই।

কাফরুল থানায় করা মামলার রায়ে সুমন ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামি হলেন কাফরুলের সোহেল দেওয়ান, নিগ্রো শামীম, নূর মোহাম্মদ, মোক্তার হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম। মামলার পর দীর্ঘদিন সুমন পলাতক থাকলেও ২০০৭ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পরে জামিনে যাওয়ার পর ২০০৭ সালের ৮ এপ্রিল থেকে সুমন নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তবে রায়ের দিন সুমন আদালতে হাজির হননি। সেদিন তাঁর বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা জারি করেন।

এ মামলায় আসামির তালিকায় নাম থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।

শাহরিয়ার আহমেদ সুমনের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর নামে কাফরুল থানায় কোনো মামলা ছিল না। এক সুমনের বদলে পুলিশ আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি বিচার চাই।’

তবে মিরপুর থানা-পুলিশ আদালতকে লিখিতভাবে বলেছে, গ্রেপ্তার সুমনের নামে মিরপুর মডেল থানায় চারটি মাদকের মামলা রয়েছে। আরও একটি মাদক মামলা রয়েছে দারুসসালাম থানায়।

এসব মামলার এজাহারে আসামির নাম কোথাও শাহরিয়ার সুমন, শাহরিয়ার সুমন ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, সুমন লেখা হয়েছে। পিতার নাম কোথাও শাহজাহান ভূঁইয়া, কোথাও শাহজাহান লেখা রয়েছে। স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ।

তিন মাসের বেশি সময় ধরে কারাভোগ করছেন শাহরিয়ার আহমেদ সুমন। ঢাকার সিএমএম আদালত জামিন আবেদন নাকচ করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী শওকত আলম। তিনি বলেছেন, নামের জটিলতাসংক্রান্ত বিষয় থাকায় সুমনের জামিন চেয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে শিগগির আপিল করবেন। আপিল আদালত থেকে শাহরিয়ার আহমেদ সুমন জামিন পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।

আরো পড়ুন : করোনায় ২ জনসহ মৃত্যু ২৯,২০০জন; ৮১৪ জন শনাক্তসহ দেশে আক্রান্ত ১৯,৮৯,৮৫৪ জন

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *