দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকি। তবে রাজনীতিতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানান হিসাব-নিকাশ। নেতারাও চেষ্টা করছেন জনগণের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ার। ঈদের মতো উৎসবগুলো রাজনীতিবিদদের গণসংযোগের বড় সুযোগ তৈরি করে দেয়। এবারের ঈদেও তাই তাঁরা ছুটছেন এলাকায়
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে এলাকায় জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ঈদুল আজহাকে ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন তাঁরা। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন। কেউ কেউ অবশ্য ঢাকাতেই থাকছেন। যাঁরা ঈদের দিনটি নিজ এলাকায় কাটাবেন, তাঁরা ঈদ উৎসবে যোগদানের পাশাপাশি এলাকার মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ ও মতবিনিময়ের কাজটা সেরে নেবেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছার পাশাপাশি দরিদ্রদের জন্য কোরবানির ব্যবস্থাও করছেন অধিকাংশ নেতা। সিলেট-সুনামগঞ্জসহ বন্যাকবলিত এলাকার নেতারা দাঁড়াচ্ছেন বন্যার্ত মানুষের পাশে।
আরো পড়ুন : মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টিতে ভেসে গেল ভারতের অমরনাথ গুহা সংলগ্ন অঞ্চল; ১৩ জনের প্রাণহানি
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, যদিও নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর সময় বাকি, এখন থেকেই তৃণমূলে মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চান তাঁরা। কেউ কেউ ঢাকায় ঈদ করলেও আগেই নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছেন। পাশাপাশি নিজ নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন ঈদসামগ্রী। ঈদের দিন ফোনে এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ও করবেন। ঈদের পরও এলাকায় যাবেন কেউ কেউ।
আরো পড়ুন : আজ ৯ জুলাই; আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা
নেতারা আরও বলছেন, গত দু’বছর করোনায় রাজনীতি স্থবির থাকায় এলাকার মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি বললেই চলে। করোনা সংকট কেটে যাওয়ায় গত ঈদুল ফিতরে সেই সুযোগ হয়েছিল। ঈদুল আজহাকে ঘিরে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর আরেকটি সুযোগ মিলেছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই সুযোগ হারাতে চাইছেন না তাঁরা। এই কারণে বেশিরভাগ নেতাই এবার ঈদ এলাকায় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরো পড়ুন : আজ শনিবার চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে
মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলীয় সংসদ সদস্য- এমন নেতারা এবার এলাকার দিকে অধিকতর মনোযোগী হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে নিজ নিজ এলাকা থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদেরও এলাকামুখী হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। নানা কারণে গত নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন- এমন নেতারাও ছুটছেন এলাকায়। অধিকতর গণসংযোগ ও জনসম্পৃক্ততার প্রমাণ দিয়েই আগামী নির্বাচনের মনোনয়নের বৈতরণী পার হওয়ার লক্ষ্য তাঁদের।
আরো পড়ুন : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ভিজিএফ চাল চুরির অভিযোগে দুই ইউপি সদস্যকে গণপিটুনি
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও ঈদ করবেন ঢাকায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে। প্রতি বছর ঈদের দিন আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বিদেশি কূটনীতিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। তবে করোনার কারণে গত দু’বছরের মতো এবারও ঈদুল আজহার দিনে প্রধানমন্ত্রীর কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি রাখা হয়নি। অবশ্য ফোনে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে অডিওবার্তায় দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরো পড়ুন : মশাখালী স্টেশন এলাকায় তিস্তার ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় ঢাকায় ঈদ করবেন। দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমু রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় ঈদ উদযাপন করবেন। তবে ঈদের আগে এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য ঈদসামগ্রী পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ দু’বছর পর গত ঈদুল ফিতরে নিজ এলাকা ভোলায় গিয়েছিলেন। এবার ঈদুল আজহার দিন ঢাকার বনানীর বাসায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। যদিও ঈদের আগেই এলাকার মানুষের জন্য উপহার পাঠিয়েছেন।
আরো পড়ুন : সমালোচনা করলে অনন্য মামুনকে কান ধরে ওঠবোস করাবো
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদ করবেন ঢাকায়। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীও ঈদ করবেন ঢাকায়। তিনি নির্বাচনী এলাকায় অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ঈদসামগ্রী বিতরণ করেছেন আগেই। সভাপতিম লীর আরেক সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ঈদ করবেন ঢাকায়। তবে ঈদের পর নিজ এলাকা টাঙ্গাইলে যাবেন তিনি। সভাপতিম লীর অন্য সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমান ঈদ করবেন ঢাকায়। এরই মধ্যে একাধিকবার নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে কাটিয়ে এসেছেন কেউ কেউ। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ঈদে নিজ এলাকা চট্টগ্রামে থাকবেন।
আরো পড়ুন : তৎপরতা শুরু কে হবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ নিজ জেলা কুষ্টিয়ায় ঈদ করবেন। এরই মধ্যে তিনি এলাকায় চলে গেছেন। ঢাকায় ফিরবেন ঈদের পর। দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঈদে ঢাকায় থাকবেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঈদ করবেন নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঈদ গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে কাটাবেন।
আরো পড়ুন : জি-২০ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশন বয়কট করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিজ এলাকা দিনাজপুরে ঈদ করবেন। এ ছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নেত্রকোনা, বিএম মোজাম্মেল হক শরীয়তপুর, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাট, মির্জা আজম জামালপুর এবং অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন পটুয়াখালীর নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। বন্যার শুরু থেকেই দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সিলেট এলাকার বন্যার্তদের পাশে ছিলেন। ঈদকে ঘিরে এই তৎপরতা আরও বাড়িয়েছেন তিনি।